কৃষি পণ্য বয়কট নয়, সমস্যা সমাধানে জনমত গড়ে তুলুন, কৃষকের পাশে দাঁড়ান-উদ্যোক্তার আহবান।

স্টাফ রিপোর্টার- গত বছরের শেষের দিকে লাভজনক ড্রাগন ফল চাষে বড় রকমের আঘাত আসে। ইউটিউব, ফেসবুকসহ বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে ড্রাগন নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণা হয়। ফল বিক্রি নিয়ে বিপাকে পড়েন আড়ৎদার ও চাষীরা। অনেক চাষীর ফল ক্ষেতেই নষ্ট হয়। এছাড়া এ বছর কৃষি পন্য বয়কটের নতুন ট্রেন্ড যুক্ত হয়েছে। ফলে এবছর উৎপাদিত ফল বিক্রি ও বাজার কেমন যায় সেদিকে তাঁকিয়ে আছি আমিসহ উপজেলার কয়েকশত কৃষি উদ্যোক্তা। কথাগুলো বলছিলেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বানুড়িয়া গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা মিজানুর রহমান। উদ্যোক্তা মিজান রমহান বলেন, ‘আমাদের কিছু সংখ্যক ড্রাগন চাষী ছোট ফল বড় করতে গত দুই বছর ধরে ইন্ডিয়ান একটি টনিক ও পরবর্তীতে দেশীয় ভাবে তৈরী টনিক ব্যবহার করেন। এতে ফলের আকার ও ওজন বৃদ্ধি পেলেও স্বাদ ও রঙ নষ্ট হয়ে যায়। টনিক ব্যবহারে লাল কালারের ফলগুলো লাল-সবুজ ও হলদেটে কালারে পরিণত হয়। কিছু কিছু ফল উদ্ভট আকৃতির হয়। এ নিয়ে এক শ্রেণির ইউটিউবার ও ফেসবুকাররা ড্রাগন ফল নিয়ে সত্য-মিথ্যার সংমিশ্রণে ভিডিও কন্টেন্ট তৈরী করে। দুই একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় অন্যরাও ভিউ পেতে শত শত ভিডিও তৈরী করেন যার অধিকাংশই নেতিবাচক। যদিও কৃষি গবেষণা অধিদপ্তরের কর্তা ব্যাক্তিরা বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে বিষয়টি স্পষ্ট করেন যে, নির্দিষ্ট মাত্রায় হরমোন ব্যবহার সারা বিশ্বেই স্বীকৃত। এছাড়া ওই সকল ফলের ল্যাবটেস্টেও ক্ষতিকর পদার্থের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। তারপর ড্রাগনে ভোক্তা ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। পাইকারী বাজারে বড় আকারের ফলগুলো বিক্রি করা যায়নি। যার কারণে এ বছর ফল বিক্রি বেশ আতংকে আছেন ড্রাগন চাষীরা। তিনি আরো বলে বর্তমান সময়ে বয়কটের ট্রেন্ড চালু হয়েছে। ফলে কৃষকের মাঝে নতুন করে আতংক শুরু হয়েছে। ফেসবুক ও ইউটিউবে এক শ্রেণির তথাকথিত সোসাল এক্টিভিস্টের তরমুজ বয়কটের ডাকে মানুষ সাড়া দেয়ায় আমরা দেখেছি ব্যবসায়ীদের তরমুজ বিক্রি বন্ধ হয়ে গেছে। তাদের তরমুজ পচেঁ যাচ্ছে। অনেকে বিক্রি করতে না পারায় ফেলে দিয়েছে। এতে যেটি হয়েছে ব্যবসায়ীরা সামান্য ক্ষতিগ্রস্থ্য হলেও বেশি ক্ষতিগ্রস্থ্য হয়েছেন আমাদের কৃষকরা। কারণ ক্রেতারা তরমুজ না কেনায় কৃষকের তরমুজ বিক্রি হয় নি। উদ্যোক্তা মিজান বলেন, বিভিন্ন মাধ্যমে আমরা জেনেছি ব্যবসায়ীরা আমাদের তরমুজ কম দামে কিনে তাদের আড়ৎ পর্যন্ত নিতে এবং ভোক্তা পর্যায়ে বিক্রি করতে গিয়ে কয়েক পর্যায়ে চাঁদা দিতে হয় তাদের। ফলে বেশি দামে বিক্রি করতে তারা বাধ্য হচ্ছেন। তাদের কথা যদি সঠিক হয় তাহলে চাঁদাবাজি বন্ধ না হলে এ সমস্যার সমাধান কিভাবে হবে? এভাবে প্রশ্ন ছোড়েন তিনি। কিছুক্ষণ থেমে হতাশ কন্ঠে তিনি বলেন, দেখুন না কিছু দিন আগে গরুর মাংশ বয়কটের ডাক দেয়া হয়েছে। যদি বয়কট করা হয় এতে ক্ষতিগ্রস্থ্য হবে কে? নিশ্চয় গরু খামারীরা। এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে তারা গরু পালন ছেড়ে দিবে। এরপর পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে গরু আনা হবে। এখানেও চাঁদাবাজি ও গোখদ্যের দাম বৃদ্ধিই মূল সমস্যা। কিন্তু এ সমস্যা দেখার কেউ নেউ। আক্ষেপ করে মিজান বলেন, যে কারণে দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে সেগুলো নিরসনে কোন ইউটিউবার কিংবা কোন ফেসবুকার জনমত গড়ে তুলতে কাজ করছেনা। তিনি আরো বলেন, এবার ড্রাগনের সিজনে হয়তো ড্রাগন বয়কটের ডাক দেয়া হবে। এখানেও ক্ষতিগ্রস্থ্য হবে কৃষক। আর্থিক অনঠনে পড়ে কৃষক ড্রাগন চাষ ছেড়ে দিবে। এরপর পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে আনা হবে ড্রাগন। এভাবেই একে একে আমাদের সব সেক্টরগুলো বয়কটের কালো থাবায় ধ্বংশ হয়ে যাবে। শিক্ষিত তরুন যুবক যারা কর্মসংস্থানের আশায় কৃষি ও পশুপালন সেক্টরে এসে অনাবাদী জমিকে আবাদী জমিতে পরিনত করেছিল তারা আবার বেকার হয়ে পড়বে। প্রতিবাদী কন্ঠে এক নাগাড়ে কথাগুলো বলেন কৃষি উদ্যোক্তা মিজানুরর রহমান এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের কাছে দাবী করেন যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের সমস্যা কেউ সৃষ্টি করতে না পারে সে দিকে তারা যেন নজর দেন। এ নিয়ে কথা হয় কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহবুব আলম রনির সাথে। তিনি জানান, উপজেলায় প্রায় ১৬৫ হেক্টর জমিতে ড্রাগন চাষ হচ্ছে। চাষীরা যাতে টনিক ব্যবহার না করে সে ব্যপারে তাদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। সম্প্রতি ঝিনাইদহ জেলা ড্রাগন চাষী কল্যাণ সমিতির সদস্যরাও টনিক বর্জনের ঘোষনা দিয়েছেন। দেশেড্রাগন উৎপাদন চাহিদার তুলনায় বেশি হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন ড্রাগন চাষ মূলত ঝিনাইদহ জেলায় বেশি হচ্ছে অন্য এলাকায় এ ফলের চাষ খুবই কম। তাই এমন আশংকার কথা তিনি ভাবছেন না। ড্রাগন অনেক পুষ্টিগুন সম্পন্ন একটি ফল। এ ফল শিশু থেকে বৃদ্ধরা খেতে পারে। তিনি ব্যাক্তিগত ভাবে সবাইকে এ ফল খাওয়ার জন্য আহবান জানান।

No comments

Powered by Blogger.