ঝিনাইদহে হাতের মেহেদীর রং না শুকাতেই স্বামীর হাতে জীবন গেল স্ত্রী ছালমার

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি - হাতের মেহেদীর রং এখনো শুকাইনি। বিয়ের তিন মাসের মধ্যে সহ্য করতে হয়েছে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। বিয়ের সময় যৌতুকের কোনো কথা ছিল না। তারপরও দুই লাখ টাকা এবং একটি মোটরসাইকেল দাবি করে স্বামী সম্রাট হোসেন। এই দাবি মেটাতে না পারায় জীবন দিতে হলো ছালমাকে। ঘটনাটি ঘটেছে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মধুহাটি ইউনিয়নের বড়বাড়ি গ্রামে। মঙ্গলবার (০২ এপ্রিল) দুপুরে স্বামী সম্রাটের বিরুদ্ধে স্ত্রী ছালমাকে হত্যার অভিযোগ উঠে। ছালমা খাতুন সদর উপজেলার মধুহাটি ইউনিয়নের যাদবপুর গ্রামের মো. আশিক মন্ডলের মেয়ে। স্বামী একই ইউনিয়নের বড়বাড়ি গ্রামের জালাল উদ্দিন ছেলে সম্রাট হোসেন। যৌতুকের জন্য স্ত্রীর গায়ে গরম পানি ঢেলে শিক্ষক স্বামীর নির্যাতন মৃত ছালমার খালা জানান, বিয়ের পর থেকেই জামাই সম্রাট সালমাকে মারধর করে আসছে। আমরা প্রতিবাদ করতে গেলে আমাদের সাথে ঝগড়া করে। রমজান মাসে শুরুতে বাবার বাড়ি আসার কথা কিন্তু তার স্বামী ও শাশুড়ি আসতে দেয়নি। ২৫ রমজানে বাড়িতে আসার কথা। এরই মধ্যে গত শুক্রবার দুপুরে ছালমাকে নিয়ে পুকুরে গোসল করতে যায় তার স্বামী সম্রাট। দু’জন মিলে গোসল করতে গেলে সেখানেই সালমাকে পানিতে ডুবিয়ে হত্যাচেষ্টা করে। সেখানে দুজন মহিলা থাকাই সেই হত্যাচেষ্টা ব্যর্থ হয়। বিষয়টি আমরা সম্রাটের বাবা-মাকে জানিয়েছিলাম। কিন্তু তারা বিষয়টি পাত্তাই দেইনি। আজকেও সালমাকে মারধর করা হয়েছে। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর আত্মহত্যার নাটক সাজাতে গিয়ে লাশ রেখে পালিয়ে গেছে বাড়ির লোকজন। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই। মধুহাটি ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. আয়ুব হোসেন বলেন,গত তিন মাস আগে গ্রামের আশিকের মেয়ের বিয়ে হয় পাশের বড়বাড়ি গ্রামের জালাল উদ্দিন ছেলে সম্রাটের সাথে। ছালমাকে গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে মরাদেহটি দেখে বোঝা যাচ্ছে যে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে , পোস্টমর্টেম এর পরেই বোঝা যাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে কি না। মধুহাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন বলেন, আমার কাছে অভিযোগ ছিল, বিবাহের পর থেকেই ছালমাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে আসছিল সম্রাট। এর আগেও তাকে পুকুরে পানিতে ডুবিয়ে হত্যা করার চেষ্টা করে হয়েছে বলে অভিযোগ করে ছালমার পরিবার। আজ দুপুরে ছালমা আত্মহত্যা করেছে বলে খবর পাই। তবে তাকে দেখে মনে হচ্ছে হত্যা করা হয়েছে। সঠিক তদন্তে বেরিয়ে আসবে হত্যা না আত্মহত্যা। ঝিনাইদহ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহিন উদ্দীন জানান, লাশটি উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে। লাশের গায়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে তাকে হত্যা করা হয়েছে। তবে ময়নাতদন্তের পর নিশ্চিত হওয়া যাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে কি না।

No comments

Powered by Blogger.