রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পেলেন না রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান মকবুল হোসেন

চিত্রা নিউজ ডেস্ক- রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহা. মোকবুল হোসেনের ক্ষমার আবেদন নাকচ করে দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। বিধিবহির্ভূতভাবে ছয় কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়ার অভিযোগে দণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক এই শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের ক্ষমার আবেদন নাকচ করা হয়। ফলে তার বেতন গ্রেডের ধাপে নিম্ন অবনতিকরণ লঘুদ বহাল থাকলো। গত ৩১ মার্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের শৃঙ্খলাবিষয়ক শাখার সচিব সোলেমান খান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বর্তমানে ওএসডি হয়ে থাকা বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহা. মোকবুল হোসেনের নামে ২০২০ সালে ১৫ জানুয়ারি রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের ছয়জন কর্মকর্তাকে বিধিবহির্ভূতভাবে পদোন্নতির আদেশ দেয়া ও এ সংক্রান্ত বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির তদন্তের জন্য নির্ধারিত তারিখ অবহিত থাকা সত্ত্বেও তদন্তে অনুপস্থিত থেকে দায়িত্ব অবহেলার কারণে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৩ (খ) অনুযায়ী ‘অসদাচরণ’ এর অভিযোগে বিভাগীয় মামলায় একই বিধিমালার বিধি ৪(২) (ঘ) বিধি মোতাবেক ২০২৩ সালের ২৭ জুলাই প্রজ্ঞাপনমূলে ‘বেতন গ্রেডের নিম্নতর ধাপে অবনমিতকর’ সূচক লঘুদ দেয়া হয়। এরপর তিনি এ আদেশের বিরুদ্ধে দণ্ডাদেশ মার্জনা করার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রপতি বরাবর পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন। কিন্তু রাষ্ট্রপতি পুনর্বিবেচনার আবেদন না মঞ্জুর করে আগের দণ্ড বহাল রেখেছেন। ফলে ড. মোহা. মোকবুল হোসেনের‘বেতন গ্রেডের নিম্নতর ধাপে অবনমিতকরণ’ সূচক লঘুদণ্ডের আদেশ বহাল রাখা হলো। তবে এ ব্যাপারে অধ্যাপক ড. মোহা. মোকবুল হোসেনের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সূত্র জানিয়েছে, এর আগে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরের এক তদন্তে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের ১৫ কর্মকর্তার পদোন্নতিতে অনিয়ম ধরা পড়ে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) বিভাগের পৃথক দুই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ২০২১ সালের ২৩ থেকে ২৫ নভেম্বর পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি সরেজমিনে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে গিয়ে এ বিষয়ে তদন্ত করে। ২০২২ জানুয়ারিতে এ কমিটি দুদক ও মাউশিতে প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে ওই ১৫ কর্মকর্তার পদোন্নতি স্থগিত এবং গ্রহণ করা অতিরিক্ত অর্থ ফেরত নেয়ার সুপারিশ করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে যাওয়ার পর পদোন্নতি স্থগিত এবং গ্রহণ করা অতিরিক্ত অর্থ ফেরত নেয়ার সিদ্ধান্ত দেয়া হয়। ওই তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের তৎকালীন চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ ও অধ্যাপক মোহা: মোকবুল হোসেনের নিজ নিজ আমলে পদোন্নতির এসব অনিয়ম ঘটে। দুই দফায় ১৫ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিতে নানা অনিয়ম করেন তারা। সিলেকশন কমিটিও নিয়ম না মেনে তাদের পদোন্নতির সুপারিশ করেছিল। প্রথমে ২০১৭ সালে ৯ জন সপ্তম গ্রেড থেকে ষষ্ঠ গ্রেডে পদোন্নতি পান। এদের পদোন্নতি দিতে সিলেকশন কমিটি ২০১৭ সালের ২১ এপ্রিল বোর্ডের চেয়ারম্যানের কক্ষে ৪৮ জন কর্মকর্তার মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ করে। কমিটির সভাপতি ছিলেন বোর্ডের তৎকালীন চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ। ৪৮ জনের মধ্যে কমিটি নয়জনকে পদোন্নতির সুপারিশ করলে ২০১৭ সালের ৯ জুলাই তাদের পদোন্নতি দেয়া হয়। শুধু মৌখিক পরীক্ষার ভিত্তিতে নয়জনের পদোন্নতির তালিকাটি করা হয়। ওই মেধাতালিকা থেকে ২০২০ সালের ১৫ জানুয়ারি বোর্ডের তৎকালীন চেয়ারম্যান মোকবুল হোসেন আরো ছয়জনকে পঞ্চম গ্রেডে পদোন্নতি দেন। প্রথমে বিতর্কিত ওই মেধাতালিকার ১ থেকে ৯ নম্বর ক্রমিকের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেয়া হলেও দ্বিতীয় পদোন্নতির ক্ষেত্রে এ ক্রমিক অনুসরণ করা হয়নি। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় চূড়ান্তভাবে দণ্ডপ্রাপ্ত হলেন অধ্যাপক মোকবুল হোসেন। তথ্য ইনকিলাব।

No comments

Powered by Blogger.