ঝিনাইদহের সোহাগী বেগমের সফলতার গল্প

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি- জাইকা সহায়তাপুষ্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের ঝগঅচ প্রকল্পের আওতায় “আশা” সংস্থার সদস্য সোহাগী বেগমের সফলতার গল্পকথা। সোহাগী বেগম , স্বামীঃ মোঃ নাজমুল,সানবান্ধা,কালিগঞ্জ, ঝিনাইদহ। সোহাগী বেগম পেশায় একজন গৃহিনী, বাবার বাড়ি একই উপজেলায়। ১০ বছর পূর্বে তাদের বিবাহ হয়। স্বামী একজন দিনমজুর। বসত বাড়ি ছাড়া তাদের কোন চাষযোগ্য জমি নেই। দৈনিক আয়ের উপর তাদের সংসার চলে। বাড়তি আয়ের কোন সুযোগ ছিল না। স্বামীর আয় দ্বারা সংসারের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য ক্রয় ছাড়া কিছুই ক্রয় করা সম্ভব হয়না। তাদের সংসারে ১টি পুত্র সন্তান আছে। বয়স তার ৭ বছর। সংসারের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে স্বামী-স্ত্রী মিলে সংসারে আয় বাড়ানোর পথ খুঁজতে থাকে। হঠাৎ একদিন ভাবে স্বামীর পাশা-পাশি আমি যদি একটা কাজ করি, তা হলে আমাদের সংসার তারাতাড়ি উন্নতি হবে। কিন্তু বাবার বাড়ির আর্থিক সচ্ছলতা না থাকার কারনে প্রাইমারী গন্ডি পার করা সম্ভব হয়নি। লেখাপড়া না জানলে তো লেখাপড়ার কোন কাজ করা সম্ভব হবে না।তাই সংসারের আয় বৃদ্ধি করার জন্য গরুপালন করার চিন্তা মাথায় আসে। কিন্তু নগদ টাকা তো নেই যে, গরু কিনবে। একদিন বিকাল বেলা পাশের বাড়ীর এক প্রতিবেশীর সাথে টাকা ধারের কথা বললে সে, সমিতিতে ভর্তি হয়ে টাকা নেওয়ার কথা বলে। সে বলে সমিতি থেকে টাকা তুললে আস্তে আস্তে শোধ করা যায়। কোন সমস্যা হয়না। প্রতি বেশী তার নিজের গল্প শুনায়, বলে, আমি বালিয়াডাঙ্গা “আশা ’’ সমিতি থেকে টাকা তুলে ১টি করে এড়েঁ গরু ক্রয় করে ৬ মাস পালন করে বিক্রি করি, তাতে আমাদের অনেক লাভ হয়। আমাদের সংসার এভাবে উন্নতি হয়েছে। এখন আর মানুষের নিকট হতে টাকা সুদে আনতে হয়না। একথা শুনে সোহাগী সাহস পায়। বাড়িতে গিয়ে স্বামীর সাথে পরামর্শ করে সংসারের আয় বৃদ্ধি করার জন্য সমিতিতে ভর্তি হওয়ার চিন্তা করে। স্বামী-স্ত্রী দু’জনে সিদ্ধান্ত নিয়ে পরের সপ্তাহে আশা সমিতি তে ভর্তি হয়। গ্রহন করে জাইকা সহায়তাপুষ্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমএপি প্রকল্পের কম লাভের টাকা। ঋণ গ্রহনের পাশা-পাশি তারা গ্রহন করে গরু লালন-পালন পদ্ধতি। যে পদ্ধতি গ্রহন করে অতি সুন্দরভাবে গরু লালন -পালন করে লাভের মুখ দেখতে পায়। পর পর ২ বার ৫০০০০ (পঞ্চাশ হাজার) ও ৬০০০০ (ষাটহাজার) টাকা দিয়ে ১টিকরে গরু ক্রয় করে। বাড়িতে বসে সোহাগী বেগম গরুর অতি যতœ করে পালন করে বিক্রি করে ভাল লাভ পায়। লাভের টাকা দিয়ে তারা ২ বিঘা জমি লিজ নেয়। ১বিঘা জমিতে ভূট্রা ও ১বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছে। ভূট্রার ফলন ভাল হয়েছে। এখনও ভাঙ্গা হয়নি, তবে ভাল লাভ পাওয়ার আশা করছেন এবং ধান ও ভাল হবে এ প্রত্যাশা করছেন। এতে সংস্থার প্রতি তাদের বিশ্বাস আরও রেড়ে যায়। এদিকে তার স্বামী নাজমুল অন্য লোকের বাড়িতে দিন মজুরীতে কাজ করে । তার কাজ হল মালিকের পাওয়ার টিলার দিয়ে জমি চাষ করা। বিনিময় পায় মাসিক বেতন। বেশ কয়েক বছর পাওয়ার টিলার পরিচালনা করায় নাজমুলের পাওয়ারটিলারের বিষয়ে তার একটা ভাল ধারনা জন্মে। মনে মনে ভাবে এবার টাকা তুলে গরু না কিনে ১টি পাওয়ার টিলার ক্রয় করব। এ ভেবে একদিন আশা সমিতির বালিয়া ডাঙ্গা অফিসে যায়। ম্যানেজারকে বলে স্যার, এবার আমি টাকা নিয়ে একটি পাওয়ার টিলার ক্রয় করতে চাই। কারণ আমার বিশ্বাস আমার যদি একটা পাওয়ার টিলার হয়,তাহলে আমাদের সংসারের আয় আরও বৃদ্ধি পাবে। আমার আর অন্য লোকের বাড়িতে কাজ করতে হবে না। আশা অফিসের ম্যানেজার তাকে টাকা দেওয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু সোহাগী ও তার স্বামী বেশ বুদ্ধিমান হওয়ায় সংস্থা থেকে বেশী ঋণ গ্রহন না করে ৩য় দফায় ৬০০০০ টাকা ও নিজের কাছে জমানো টাকা মিলে ১৭০০০০(একলক্ষ সত্তর) টাকায় ১টি পাওয়ারটিলার ক্রয় করে। প্রতি মৌসুমে খরচ বাদে শুধুমাত্র পাওয়ার টিলার দ্বারা ৪০-৪৫ হাজার টাকা আয় হয়। বর্তমানে তারা আগের চেয়ে অনেক ভাল আছে। আগামীতে ট্রাক্টর ক্রয় করার সপ্ন দেখছে। ‘আশা’ সংস্থা থেকে জাইকা সহায়তাপুষ্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমএপি প্রকল্পের অল্প লাভের টাকা পেয়ে তারা অনেক খুশী ও সংস্থার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে।

No comments

Powered by Blogger.