কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ২০২৪ হেভিওয়েট দুই প্রার্থীর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারে পাল্টে গেছে নির্বাচনী চিত্র। ভোটের মাঠে এখন ইমেজে সংকট

রবিউল ইসলাম,স্টাফ রিপোর্টার- ভোটের ঢাক ঢোল পিটিয়ে আগে থেকেই নির্বাচনী মাঠে ছিলেন তারা। সে লক্ষেই মনোনয়নপত্র ক্রয় ও জমাও দিয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই চেয়ারম্যান পদের হেভিওয়েট দুই প্রার্থী বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর সিদ্দিক ঠান্ডু ও উপজেলা জামায়াতের আমির মাওঃ ওলিয়ার রহমানের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারে নির্বাচনী ইমেজ অনেকটা ম্লান হয়ে পড়েছে। তবে, রাজনৈতিকভাবে তাদের স্ব স্ব দলীয় সাংগাঠনিক অবস্থা মজবুত থাকলেও মনোনয়ন প্রত্যাহারের বিষয়ে উঠে এসেছে নানান মন্তব্য। কেউ বলছে, এবারের নির্বাচনে দলীয় প্রতিক না থাকা বা দলের একক প্রার্থী চুড়ান্ত না হওয়াতে তারা ভোট থেকে সরে গেছেন। আবার কেউ বলছে, দলীয় সংগঠনের নির্দ্দেশনায় সরে গেছেন তারা। তবে এসব বিষয় ছাড়াও সাধারন ভোটারদের অভিমত এবারের নির্বাচনে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে অংশগ্রহনকারী প্রার্থীরা সবাই আওয়ামীমনা। যে কারনে কোন বিরোধীদলীয় পক্ষ না থাকায় যেন এক দলের নেতা বাছাইয়ের মত ভোটযুদ্ধ হচ্ছে। সবমিলিয়ে এমন অবস্থায় কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের নির্বাচনী আমেজে ভাটা পড়েছে। তারপরও প্রতিক পেয়েই প্রার্থীরা শহর গ্রামাঞ্চলে তাদের প্রচার প্রচারনা ও ভোট ভিক্ষায় মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে হেভিওয়েট দুই প্রার্থীর প্রার্থীতা প্রত্যাহারের পর চেয়ারম্যান পদে এখন পর্ষন্ত ৫ জন প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। তারা হলেন, বর্তমান উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের (ভারপ্রাপ্ত) সভাপতি শিবলী নোমানী (আনারস), সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য ও উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন সোহেল (টেলিফোন), সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মতি (মটরসাইকেল), সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও কাষ্টভাঙ্গা ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ডা: রাশেদ শমসের (হেলিকপ্টার) ও জাতীয় শ্রমিক লীগের ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার সহ-সভাপতি ইমদাদুল হক সোহাগ (কাপ পিরিচ) প্রতিকে নির্বাচনী ভোটযুদ্ধে অবতির্ণ হয়েছেন। এছাড়াও ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) পদে ৩ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে প্রথম ধাপের নির্বাচনে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ১১ টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌরসভাসহ এ উপজেলার মোট ভোটার সংখ্যা ২লক্ষ ৪৪ হাজার ৯শ ২৪ জন তার মধ্যে পুরুষ ভোটার ১লক্ষ ২৪ হাজার ৩শ ২৯ জন, মহিলা ভোটার ১ লক্ষ ২০ হাজার ৫শ ৯২ জন তৃতীয় লিঙ্গের ৩জন। ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হইবে আগামী ৮ই মে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার সংক্রান্ত বিষয়ে বিগত তিন বারের নির্বাচিত বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও আ’লীগের প্রবিন নেতা জাহাঙ্গীর সিদ্দিক ঠান্ডু সাংবাদিকদের জানান, ইতিপূর্বে তিনি দলীয় মনোনয়নেই নির্বাচন করে চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। কিন্তু এবারে তার দল আ’লীগ দলীয় মনোনয়ন বা প্রতিকের বাইরে ভোট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সে কারনে দলের থেকেই একাধিক প্রার্থী হয়েছেন। যারা প্রার্থী হয়েছেন সবাই তার জুনিয়র। সে কারনে শেষ মুহুত্বেও একক প্রার্থীতে কেউই সমঝোতা বা আলোচনা না করায় তিনি তার নিজ ইচ্ছাই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন বলে জানান তিনি। অপরপ্রার্থী উপজেলা জামায়াতের আমির মাওঃ ওলিয়ার রহমান জানান, প্রথম ধাপে নির্বাচনে সারাদেশে তাদের দলের হয়ে ৮০ জন প্রার্থী হয়েছিল। সর্বশেষ তাদের দলের কেন্দ্র থেকে সিদ্ধান্ত আসে নির্বাচন করা যাবে না। তাই তিনি তার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এবারের ভোট নিয়ে সাধারন ভোটারদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। তারা বলছে, নির্বাচনে অংশ নেওয়া সকল প্রার্থীই আওয়ামী মনা। সে কারনে বিরোধীদল বা স্বতন্ত্র ঘরানার কেউ অংশ না নেওয়ায় ভোটের উৎসব ও আমেজ অনেকটাই ঝিমিয়ে গেছে। কারো কারো অভিমত এবারের নির্বাচনে ব্যাক্তিগত যোগ্যতাই প্রার্থীদেরকে নির্বাচনী বৈতরনী পার হতে হবে। কিন্তু তারপরও কেউ কেউ আবার তাকিয়ে আছেন স্থানীয় এমপির আশীর্বাদের আশায়। যে কারনে ভোটের মাঠ চষে বেড়ানোর পাশাপাশি‘ অনেকে আবার এমপির আশীর্বাদ পেতে প্রতিদিনই ধরনা দিচ্ছেন দলীয় কার্যালয়ে। তবে, স্থানীয় এমপি কেন্দ্রের নির্দ্দেশনা মেনে এখনও কারো পক্ষে কোন মতামত দেননি। কিন্তু তারপরও শেষ মুহুর্তে যদি তিনি কারো আশীর্বাদ দেন তবে তারই জয় সুনিশ্চিত হতে পারে বলে ধারনা অনেকেরই। তবে, উপজেলা নির্বাচনের বিষয়ে ঝিনাইদহ -৪ আসনের সংসদ সদস্য ও কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ারুল আজীম আনার বলেন, এবারের নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার অবাধ নিরেপক্ষ সুষ্ঠু নির্বাচন করারোন জন্য বদ্ধ পরিকর। বারবার সফল প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের পক্ষ থেকে ও আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে নিরপেক্ষ নির্বাচন করারনোর ক্ষেত্রে আন্তরিক ভাবে সহযোগিতা অব্যহত রাখবেন বলে প্রতিশ্রুতি ব্যাক্ত করেছেন। তারই আলোকে এখনও পর্যন্ত প্রথমধাপের নির্বাচনের সুন্দর পরিবেশ আব্যাহত রেখেছেন। কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাচনে যারা অংশগ্রহন করেছেন সবাই আওয়ামী লীগের পক্ষের মানুষ নৌকার পক্ষের মানুষ এবার নির্বাচনে যেহেতু কোন দলীয় প্রতিক নেই সেই কারনে দলের কোন সিদ্ধান্ত নেই। সুন্দর পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে এবং কোন এমপি মন্ত্রীদের নিকট আত্বীয় ভোটে দাঁড়াতে পারবে না এই মর্মেও দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। দলের সাধারণ সম্পাদক মিডিয়াসহ বিভিন্ন ভাবে প্রচার প্রচারণা শুরু করেছেন। সেই কারনে কোন প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার সুযোগ নেই। ভোট যেনো সুষ্ঠু সুন্দর নিরপেক্ষ হয় সেই দিকে সজাগ থাকতে হবে। কোন প্রার্থী যদি আমাদের স্বরনাপন্ন হয় তাহলে তাদের প্রতি কদর থাকবে তবে কারও পক্ষে কাজ করার সুযোগ নেই। দলের পদপদবী ব্যাবহার করে কেউ প্রচার প্রচারণা বা বিলবোর্ড ব্যাবহার করতে পারবেনা। নিজের মতো করে ভোট করতে হবে কোন ভাবেই যেন নির্বাচন কমিশনারের নির্দেশনা ব্যাহত না হয় এবং কোন বিশৃঙ্খলা র্সষ্ঠি না হয় সেদিকে সকলকে খেয়াল রাখতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.