কোটচাঁদপুরে জাল সনদে ১৪ বছর চাকুরীর অভিযোগ স্কুল শিক্ষকের বিরুদ্ধে

 

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি- ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে জাল সনদে ১৪ বছর চাকুরী করার অভিযোগ উঠেছে এক স্কুল শিক্ষকের বিরুদ্ধে। কোটচাঁদপুর উপজেলার সাফদারপুর মুনছুর আলী একাডেমি বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিবন্ধন সনদেও আবুল খায়ের নামের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে চাকরির অভিযোগ উঠেছে। তিনি দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে জাল সনদে সহকারী শিক্ষক (সমাজবিজ্ঞান) হিসাবে ওই বিদ্যালয়ে চাকরিরত রয়েছেন। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর অনেকটাই নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষক আবুল খায়ের ২০০৮ সালে পাশ করা একটি জাল শিক্ষক নিবন্ধন সনদ জমা দিয়ে ২০১০ সালে নিয়োগ নিয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়মিত বেতন-ভাতা উত্তোলন করছেন। এরপর তিনি ২০১১ সালের ১ মে ১০৫৫৯৩১ ইনডেক্স নম্বরে এমপিওভুক্ত হন । নিয়োগ দানের সময় প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন আমিন উদ্দীন। অবশ্য তিনি বর্তমানেও প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষককের দায়িত্বে। এই প্রধান শিক্ষকই জাল সনদে আবুল খায়েরকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে চাকুরির সুযোগ করে দিয়েছেন।

অনুসন্ধানে যতটুকু বেরিয়ে এসেছে সেটিও ভয়াবহ। ওই বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক (সমাজবিজ্ঞান) পদে নিয়োগের জন্য ২০/০৮/২০১০ তারিখে একটি আঞ্চলিক ও ১৮/০৮/২০১০ তারিখে একটি জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ পায়। বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আগ্রহী প্রার্থীদের কাছ থেকে আবেদন আহ্বান করা হয়। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর বিধি

মোতাবেক আবুল খায়ের সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ের সহকারী শিক্ষক পদে আবেদন করেন। সে সময় ঝিনাইদহ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে মোট ৭জন প্রার্থী অংশ নেন। কিন্তু যোগ্য প্রার্থীদের বাদ দিয়ে নিবন্ধন সনদ যাচাই বাছাই না করে সর্বোচ্চ নম্বরধারী দেখিয়ে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়। যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন প্রধান শিক্ষক আমিন উদ্দীন। তিনি বাদেও তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নওশের আলী দলীয় প্রভাব খাটিয়ে

নিয়োগ বোর্ড কমিটিকে চাপ দিয়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে আবুল খায়েরকে নিয়োগ দেন। এই নিয়োগ বোর্ড কমিটিতে ডিজির প্রতিনিধি ছিলেন, ঝিনাইদহ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা রোকেয়া খাতুন, জেলা শিক্ষা অফিসার এস.এম ছায়েদুর রহমান, প্রধান শিক্ষক আমিন উদ্দীন, ম্যানেজিং কমিটির এক সদস্যসহ মোট ছয় জন। সূত্রটি বলছে, আবুল খায়ের গত ২৫/০৯/২০১০ ইং তারিখের নিয়োগ কমিটির সুপারিশের

প্রেক্ষিতে ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক অত্র বিদ্যালয়ে ‘সহকারী শিক্ষক' পদে নিয়োগের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৭/০৯/১০ তারিখে যোগদান করেন।

শিক্ষক নিবন্ধনের ভুয়া কাগজ জমা দিয়ে চাকরি পেয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তি শিক্ষক হিসেবে এখনও চাকরি করে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক আবুল খায়েরের কাছে জানতে চাইলে তিনি জালিয়াতির বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি

 সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, নিয়োগের সময় স্কুল কর্তৃপক্ষ সনদ যাচাই করেছে। তাছাড়া এর আগেও একাধিকবার শিক্ষার বিভিন্ন দপ্তর থেকে সনদ যাচাই করেছে। সবাই সঠিক পেয়েছে। তাই তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ

মনগড়া বলে তিনি দাবি করেন। ১৪ বছর ধরে সরকারি তহবিল থেকে নিয়েছেন বেতন-ভাতা অভিযুক্ত শিক্ষকের জাল সনদে চাকরির বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক আমিন উদ্দীন বলেন, পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর

১২টি আবেদন জমা পড়ে। পরবর্তীতে আবেদনপত্রের সাথে সংযুক্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও সনদ যাচাই-বাছাই করে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হয়েছে।

এক্ষেত্রে সনদ ভুয়া কিংবা জাল হওয়ার কথা নয় । আর নিয়োগে কোন অস্বচ্ছতাও নেই । এ ব্যাপারে প্রাথমিক ভাবে অনুসন্ধান শেষে নিয়োগের সময় ওই শিক্ষকের জমা দেয়া রোল নম্বর-১১৬১১৫৩০ এবং নিবন্ধন নম্বর-৮০০০৫৮৮৯ এর শিক্ষক নিবন্ধন সনদটি যাচাইয়ের জন্য জেলা শিক্ষা অফিসে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে তার সনদ যাচাইয়ের পর জেলা

শিক্ষা অফিস কর্তৃপক্ষ আবুল খায়েরের শিক্ষক নিবন্ধন সনদটি সঠিক নয় এবং জাল ও ভুয়া বলে জানালেও আবুল খায়েরের চাকরির ক্ষেত্রে সেটি কোন প্রভাব ফেলেনি।

এ ব্যাপারে কোটচাদপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জানান, তথ্য গোপন করে জাল সার্টিফিকেট জমা দিয়ে চাকরি করার কোন সুযোগ নেই । সনদটি যাচাই-বাছাই করে বাতিল করার প্রয়োজন ছিলো।

এ সকল অভিযোগের বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার মো. আজহারুল ইসলাম বলেন, ২০ মার্চ ২০০৫ সালের পর এনটিআরসিএ সনদ বাধ্যতামূলক । কারও সনদ জাল প্রমাণিত হলে তার সনদের বিপরীতে যে পরিমাণ অর্থ গ্রহণ

করেছে তা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়া এবং তাকে চাকরিচ্যুত করার বিধান রয়েছে। অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে আবুল খায়েরের ক্ষেত্রে বিধি মোতাবেক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।


No comments

Powered by Blogger.