কালীগঞ্জে সরকারি মাহতাব উদ্দিন কলেজে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম: আতঙ্কে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

এম, শাহজাহান আলী সাজু॥ ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে সরকারি মাহতাব উদ্দিন কলেজের মূল ভবনে ঝুঁকি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে পাঠদানসহ অভ্যন্তরীন পরীক্ষা এবং বোর্ড ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকারি পরীক্ষাও অনুষ্ঠিত হচ্ছে । সরকারি এ কলেজটিতে ৭টি ভবনের মধ্যে দ্বিতল ভবন ৫টি। ১টি অডিটোরিয়াম ও ২টি একতলা ভবন রয়েছে। ৩টি দ্বিতল ভবনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত উপজেলার ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি মূল ফটকের পাশে অবস্থিত পুরাতন দ্বিতল ভবনটি কলেজের জন্ম লগ্ন থেকে দন্ডায়মান রয়েছে। ভবনটির বর্তমানে জরাজীর্ণ অবস্থা সর্বত্র ফুটে উঠেছে। বের হয়ে আছে বিমের রড, সর্বত্র খসে পড়ছে পলেস্তার। ঝুকিপূর্ণ ভবনটিতে একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ায় প্রাণহানীসহ যেকোন বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশংকা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। সরেজমিনে সরকারি মাহতাব উদ্দিন কলেজে গিয়ে দেখা যায়, কলেজটির মূল পুরাতন ভবনে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের অভ্যন্তরীন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ১৬ কক্ষ বিশিষ্ট ভরনে রয়েছে ২টি শিক্ষক কমনরুম, ২টি ছাত্রী কমানরুম, ২টি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রন কক্ষ ও ১টি লাইব্রেরী। বর্তমানে ভবনটির অবস্থা খুবই নাজুক ও ঝুঁকিপূর্ণ। কলেজের মূল ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ এবং ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় প্রায় চার বছর আগে উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী এবং তৎকালীন জেলা প্রশাসক রফিকুল ইসলাম মৌখিকভাবে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেন বলে জানা যায়। এই ভবনটির পূর্ব পাশে রয়েছে একতলা বিশিষ্ট দুই কক্ষের একটি ছাত্র কমনরুমসহ স্কাউট ও ক্রীড়া কক্ষ । যা সম্পূর্ণ ব্যবহার অনুপযোগি হয়ে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে আছে। মূল ভবনসহ জরাজীর্ণ ভবনগুলো ইতিপূর্বে বেশ কয়েকবার সংস্কার করা হলেও বয়সের ভারে পুরানো চেহারায় ফিরে এসেছে। এর পরেও ঝুকি নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। কলেজ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬৬ সালে সরকারি মাহতাব উদ্দিন কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১৮ সালের ৮ আগস্ট কলেজটি সরকারিকরণ করা হয়। বর্তমানে কলেজটিতে উচ্চ মাধ্যমিকে মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষা, বিজ্ঞান, বিএম, ডিগ্রী কোর্সে বিএ, বিবিএস,বিএসসি এবং অনার্সে বাংলা, ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান, মার্কেটিং বিষয়ে প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থী নিয়মিত রয়েছে। অনার্সে কলেজটিতে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইসলামী স্টাডিজ বিষয়ে অনুমোদন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানা যায। উপজেলার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ সরকারি মাহতাব উদ্দিন কলেজটিতে ১০০ জন শিক্ষক কর্মচারী কর্মরত রয়েছে। কলেজের শিক্ষার্থী ছাত্রদল নেতা ইফতি জাহান জানান, পূরানো মূল ভবনে ক্লাস নেয়া হয়। ভবনটি জরাজীর্ন হওয়ায় শ্রেণী কক্ষে থাকাকালীন ভয় ও আতংকে থাকতে হয়। দ্বিতীয় তলায় শ্রেণি কক্ষের বিমের ঢালাই করা বেশ কিছু অংশ ভেঙে রড বের হয়ে গেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরেছে। কলেজের শিক্ষার্থী জাবেদ আলীর পিতা আজগর আলী বলেন,আমার ছেলে কলেজের পুরাতন ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ক্লাস করে শুনেছি। এজন্য ছেলে কলেজে গেলে আতংকে থাকতে হয়। এরকম অবস্থার মধ্যেও ঝুঁকি নিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ কিভাবে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করছেন তা আমার বুঝে আসেনা। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে অনাকাংক্ষিত কিছু ঘটলে তার দায় কে নেবে বলে বলে তিনি প্রশ্ন রাখেন। সরকারি মাহতাব উদ্দিন কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো: আকতারুল ইসলাম বলেন, আমাদের কলেজের মূল ভবনটি অত্যন্ত জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। শিক্ষক শিক্ষার্থী সকলেই কলেজে থাকাকালীন আতংকে থাকেন। কলেজটিতে ব্যবহার উপযোগী বা নতুন ভবন না থাকায় অনেকটা বাধ্য হয়েই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই পাঠদান এবং পরীক্ষা সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। কলেজের পক্ষ থেকে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে নতুন ভবনের জন্য একাধিকবার আবেদন করেও কোন সুফল মেলেনি। তিনি কলেজটিতে শিক্ষার সুন্দর পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে নতুন ভবন নির্মাণের দাবি করেন। এছাড়াও তিনি কলেজের মাঠ সংস্কার, ছাত্রাবাস, ছাত্রী নিবাস, শৌচাগার সমস্যার কথা তুলে ধরেন। মাহতাব উদ্দিন কলেজের অধ্যক্ষ মনোজ কান্তি বিশ্বাস (ভারপ্রাপ্ত) বলেন, দীর্ঘদিন ধরে কলেজের মূল ভবনসহ বেশ কয়েকটি ভবনের জরাজীর্ণ দশা। পরিস্থিতি এতই খারাপ যেকোন সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসক মহোদয় কলেজটি পরিদর্শন করে মৌখিকভাবে জরাজীর্ণ ভবনগুলো পরিত্যক্ত ঘোষণার পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানান। তিনি অবিলম্বে নতুন ভবন নির্মানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনে সরকারের আশু পদক্ষেপ কামনা করেন। এ বিষয়ে সরকারি মাহতাব উদ্দিন কলেজের সভাপতি এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার দেদারুল ইসলাম বলেন, ভবনের বিষয়টি খুবই জরুরী। অধ্যক্ষের সাথে আলোচনা করে সরকারের যথাযথ দপ্তরে আবেদনসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। উপজেলার ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য যা কল্যাণকর সেটাই করা হবে বলে তিনি জানান।

No comments

Powered by Blogger.