জীবন সংগ্রামে হেরে গেলো মেডিকেল ছাত্রী নন্দীনি! পূরণ হলোনা গরীব বাবা- মায়ের স্বপ্ন!




রবিউল ইসলাম, স্টপ রিপোর্টার:
দুর্গাপূজায় ঝিনাইদহের শৈলকূপায় মামা বাড়িতে বেড়াতে  গিয়ে বন্ধু বান্ধবীদের সঙ্গে মদপানে অসুস্থ হয়ে পড়েন সে। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল ভোরে নিভে যায় তার দীপ্তিময় জীবনের আলো।
অনেক স্বপ্ন নিয়ে মাত্র ৮ মাস আগে মেধা তালিকায় ১৩৩ তম হয়ে মানবিক ডাক্তার ডাক্তার হওয়ার প্রত্যয়ে  ভর্তি হয়েছিল স্বপ্নের ঢাকা মেডিকেল কলেজে। কিন্তু সামান্য ভুল আর ক্ষনিকের সুখাচ্ছন্দ্যের মোহে নিভে গেল জীবন প্রদীপ। 
কেমন অদ্ভুত এক মানবজনম! যেই বাবা মেয়ের সাফল্যে অশ্রু মুছতে মুছতে স্বপ্ন এঁকেছিলেন, এখন কিনা সেই মেয়ের নিথর দেহ নিয়ে ফিরতে হচ্ছে গ্রামে।
মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় সারা দেশের হাজারো মেধাবীর ভিড়ে (১৩৩)তম হয়ে ইতিহাস গড়েছিলেন নন্দিনী রানী সরকার।ঠিকঠাক তিন বেলা খেতে না পারা কন্যার এমন সাফল্যে আলোড়ন তুলেছিল সারাদেশে। অসুস্থ শরীরে ইজিবাইক চালিয়ে সংসার টানা বাবার ঘরে তখন সে কী ভীষণ দুশ্চিন্তা মেশানো আনন্দ।ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়া মানেই নতুন খরচ নতুন সংগ্রাম।সংবাদপত্রে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছিলেন অনেকেই। রাজনীতিক থেকে সাধারণ মানুষ, সবার সহানুভূতি ছুঁয়ে গিয়েছিল এই দরিদ্র মেধাবী কিশোরীর জীবন সংগ্রামকে।
নন্দিনীর স্বপ্ন ছিল একদিন চিকিৎসক হয়ে দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়াবেন। নন্দীনি বলেছিলেন, “আমি যেমন দরিদ্র, অনেক দরিদ্র মানুষ আছে, যারা বিনা চিকিৎসায় মারা যায়। আমি তাদের সেবা করতে চাই।”
কিন্তু সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। হৃদয়বিদারক এক ঘটনায় শেষ হয়ে গেল নন্দিনির জীবন ও অপার সম্ভাবনা। 
মদ পানে সে অভ্যস্ত ছিলনা কিন্তু বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে দু চুমুক মদ পানই তার জীবনের কাল হয়ে দাড়াল, নিভে গেল জীবন প্রদীপ আর কলঙ্ক রেখে গেলে এই পার্থিব জগতে। 
উৎসব-পার্বণ মানেই আনন্দ, সেখানে মদ্যপানের মতো ক্ষতিকর অভ্যাস ঢুকে যাওয়া নিঃসন্দেহে ভয়ঙ্কর। এই একরকম "কালচার" আজ একটি সম্ভাবনাময় জীবন কেড়ে নিল। অভ্যস্ত নয় বলে নন্দিনী হয়তো জানতেন না কয়েক চুমুক মদই তার জীবনের  ইতি টেনে দেবে।ভেঙে দেবে তিলে তিলে জমানো বাবা-মায়ের সবটুকু স্বপ্ন আর সম্মান। আমরা কেউ যেন এমন বদ অভ্যাসে জড়িয়ে আধুনিকতায় কাল থাবায় জীবনকে বিলিয়ে না দেয়। ওপারে ভাল থাকুক নন্দীনি।

No comments

Powered by Blogger.