বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস'১৮ ও স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বাংলাদেশ


নূরুজ্জামান কাকন :
৭ এপ্রিল বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস, ১৯৪৬ সালের এই দিনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো"সাবার জন্য স্বাস্থ্য " এই মুলমন্ত্র নিয়ে এখনো সফলতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে সংস্থাটি। ১৯৪৬ সালের জুন ও জুলাই মাসে আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সম্মেলন এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাংগঠনিক আইন গৃহীত হয়, ১৯৪৮ সালের ৭ এপ্রিল এই সংগঠন আইন আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হয়। এইদিন " বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস " বলে নির্ধারিত হয়।

প্রতিবছর সংস্থাটি এমন একটি স্বাস্থ্য ইস্যু বেছে নেয়, যা সারা পৃথিবীর জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। সেদিন স্থানীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে পালিত হয় এ দিবসটি। এ বছরের প্রতিপাদ্য বিষয়" টহরাবৎংধষ যবধষঃয পড়াবৎধমব:বাবৎুড়হব,বাবৎুযিবৎব." সার্বজনীন স্বাস্থ্য পরিসেবা : সবারজন্য, সর্বত্র "

সার্বজনীন স্বাস্থ্য বলতে এমন ব্যবস্থাকে বোঝানো হয়েছে যেখানে সবার জন্য পরিমিত স্বাস্থ্যসেবা রয়েছে,স্বল্প খরচে যখন যেখানে দরকার। কাউকে যেন দৈনন্দিন প্রয়োজন মিটাবে, নাকি স্বাস্থ্যসেবা নিবে এটার মধ্যে যেকনো একটাকে বেছে নিতে না হয়। সচারাচর যেসব রোগ হয়, তার স্বল্প খরচে হাতের নাগালেই যেন চিকিৎসার সুযোগ থাকে। বিশেষায়িত রোগগুলোর চিকিৎসা না হোক অন্তত একেবারে বিনা চিকিৎসায় যেন কেউ না মারা যায়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এবারের বিষয়টা অত্যান্ত সময় উপযোগী। দিবসটি সারা বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে উৎযাপিত হবে,তাছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আর্থিক এমনকি স্বল্পমূল্যে কিংবা বিনামূল্যে চিকিৎসা উপকরণ সরবরাহ করে থাকে তাদের প্রতিপাদ্য বিষয়টি বাস্তবায়নের লক্ষে বিশেষ করে স্বল্প উন্নত দেশগুলোকে।
যা আমাদের মতো স্বল্প উন্নত উন্নয়নশীল দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যদি সরকারী উদ্যোগ ও তহবিলের সুপরিকল্পিত এবং যথাযথ ব্যবহার করতে পারি তাহলে এসব দাতাসংস্থার অনুদান সহায়তা নিয়ে সহজেই মানুষের নাগালের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছাতে পারব। 'গ্লোবাল বার্ডেন অব ডিজিজেস' প্রতিবেদনে বিগত ২৫ বছরে স্বাস্থ্যখাতে উন্নয়ন সূচকে আমাদের দেশ ভারত-পাকিস্থান থেকেও অনেক এগিয়ে আছে। শিশু মৃত্যুহার, গর্ভকালীন মাতৃমৃত্যুহার, জনসংখ্যা বৃদ্ধি হার সংক্রামক ব্যাধির বিস্তার যেমন কমেছে গড় আয়ু তেমনি বেড়েছে যা পার্শবর্তী দেশগুলোর কাছে রোল মডেল। ২০০৭ সালের পর থেকে আর কোন পোলিও রোগীর সন্ধান না পাওয়ায় এশিয়ার ১১টি দেশের সাথে বাংলাদেশকেও পোলিওমুক্ত হিসেবে ঘোষণা করা হয়। টিকাদান কর্মসূচী ও ভিটামিন-এ ক্যাপ্সুল বিতরণে জাতিসংঘ পুরুষ্কার, বাংলাদেশ আইসিডিডিআরবি কর্তৃক ডায়রিয়া,কলেরার প্রতিষেধক আবিষ্কার, কমিউনিটি মডেল ক্লিনিক সহ বিভিন্ন ক্ষেত্র আমাদের মত স্বল্প মাথাপিছু আয়ের দেশে এ সাফল্য ঈর্ষাণীয়।
ইতিমধ্যে দেশের টারশিয়ারী লেভেলের হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল গুলোতে বহির্বিভাগে ৫/১০ টাকার টিকিট নিয়ে বিশেষায়িত ডাক্তার দেখানো যায়। এই সেবাটা যদি সব জেলা, উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন পরিষদ লেভেলে নিতে যায় এবং পর্যাপ্ত চিকিৎসক,ওষুধ সরবরাহ ও অন্যন্ন সুবিধা থাকে তাহলেই সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এবার প্রতিপাদ্য বিষয়টি যথাযথ বাস্তবায়ন সম্ভব।বর্তামান সরকার ইতিমধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছে, বিশেষ বিসিএস-এর মাধ্যমে দশ হাজার এমবিবিএস ডাক্তার নিয়োগ হবে, যাদের কর্মস্থল হবে জেলা-উপজেলা হেল্থ কমপ্লেক্সগুলোতে। কিন্তু কথা হল সেখানে চিকিৎসাসেবা দেবার জন্য যদি প্র্রয়োজনীয় উপকরণ, ওষুধ, পরিবেশ না থাকে কিংবা সেইসব ডাক্তারদের যদি বিসিএস ক্যাডার হিসেবে যথাযথ মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা না দেয়া হয় তাহলে সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিয়া কখনো সম্ভব হবে না। তাই এবিষয় গুলো গুরুত্বের সাথে দেখতে হবে। বিশেষ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রালয়কে আরো বেশি তৎপর হতে হবে,স্বাস্থ্যখাতে বাজেট বাড়াতে হবে এবং তার যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ কমাতে হবে, চিকিৎসকদের আরো আন্তরিক হতে হবে, হাতুড়ে, স্যাকমোদের দৌরাত্ম্য কমাতে হবে, সাধারণ মানুষ ও মিডিয়ার ডাক্তার বিরুপ দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। তাহলে ভালো কিছুর আশা করতেই পারি আমরা। স্বাস্থ্য খাতে উন্নয়ন আরো তরান্বিত হবে। দেশ এগিয়ে যাবে। বিনা চিকিৎসায় আর একটি মানুষও প্রাণ হারাবে না। সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিপাদ্য বিষয় সফল হবে। আশাবাদী আমরা।


No comments

Powered by Blogger.