সোলার ইরিগেশন পাম্পিং সিস্টেম কালীগঞ্জে সূর্যের আলোয় চলছে সেচকাজ,লোডসেডিং’র ভয় নেই

সাঈদুর রহমান,সংবাদদাতা,কালীগঞ্জ(ঝিনাইদহ)
বিদ্যুৎ বা ডিজেলের ওপর নির্ভর না করে সূর্যের আলোকে কাজে লাগিয়ে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে সেচকাজে ব্যবহার করা হচ্ছে সোলার ইরিগেশন পাম্পিং সিস্টেম। আর সোলার পাম্পের মাধ্যমে চলতি মৌসুমে অতিরিক্ত ব্যয় ছাড়াই প্রায় ৭৫০ বিঘা জমিতে সেচ সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে। ফলে মাঠের পর মাঠের পর মাঠ দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠেছে সবুজ ধানক্ষেত। বাংলাদেশ সরকারের স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের সহযোগিতায় জেলার কালীঘ্হে এই সেচ প্রকল্পের বাস্তবায়ন করছে এইড ফাউন্ডেশন নামের একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা। সোলার ইরিগেশন পাম্পিং সিস্টেম ব্যবহারের ফলে স্বল্প খরচে জমিতে সেচ দেয়া যাচ্ছে। ফলে বিদ্যুৎ ও ডিজেল খরচ বেঁচে যাচ্ছে। যে কারণে লোডশেডিং এখন আর সেচকাজে কোনো বাধা হচ্ছে না। সেচকাজে বিদ্যুৎ ব্যবহার না করায় জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ ঘাটতি কমে আসছে। ফলে পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে আমাদের চারপাশ।
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ভিটশ্বর গ্রামের কৃষক আলফা দফাদার। সোলার ইরিগেশন পাম্পিং সিস্টেমের আওতায় ৬ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন। এতদিন ডিজেল চালিত পাম্প ব্যবহার করে নিজের ক্ষেতে পানি সরবরাহ করে আসছিলেন। প্রতি বছর দুটি ধানের চাষ করতে প্রায় ৫৫ হাজার টাকা খরচ হতো। গত কয়েক বছর হলো সোলার প্যানেল দিয়ে পানি সেচ দেয়ায় ৩৫ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। ফলে বেঁচে যাচ্ছে ২০ হাজার টাকা।
উপজেলার হরদেবপুর গ্রামের কৃষক সঞ্জয় কুমার জানায় , এবছর তার ৪ বিঘা জমিতে ইরি ধানের চাষ রয়েছে। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এইডের সহকারী কর্মসূচি সমন্বয়কারী মো. শারফুল ইসলাম বলেন, 'আমাদের গ্রিন কর্মসূচির আওতায় স্থাপিত একটি পাম্পে ৯৬-১২৭টি পর্যন্ত সৌরকোষ বা পেস্নট একত্রে সংযুক্ত করে তৈরি করা হয়েছে সৌর প্যানেল। ওই সৌর প্যানেলের ওপর সূর্যের আলো পড়তেই বৈদ্যতিক ভোল্টেজ তৈরি হয় এবং সংযুক্ত তারের মাধ্যমে নির্দিষ্ট স্থানে জমা হয়। সেই বিদ্যুৎ দিয়ে চলে একটি পাম্প। একটি সেচযন্ত্র দিয়ে সকালে সূর্য ওঠার পর থেকে বিকাল পর্যন্ত জমিতে সেচ দেয়া যায়। সূর্যের তাপ যতই বাড়ে পানি ততই বাড়ে। প্রতিদিন একটি সৌরপাম্প থেকে ৯ লাখ থেকে ১৮ লাখ লিটার পানি উত্তোলন করা হয়। সেকেন্ডে ৪৮ থেকে ৫০ লিটার ওঠে। যা দিয়ে ৪৫ থেকে ৫৫ বিঘা জমির সেচকাজ করা যায়।' তিনি আরও জানান, একজন কৃষককে ইরি মৌসুমে সেচ কাজের জন্য বিঘা প্রতি ৩৫০ টাকা থেকে পাঁচ হাজার টাকা এবং বোরো মৌসুমে বিঘা প্রতি ৭০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা দিতে হয়। এছাড়া সেচ কাজের জন্য ড্রেনের পরিবর্তে পাইর্পিং পদ্ধতি করায় বাড়তি পানি ও জমি অপচয় হয় না। স্থানীয় চাষিরা বলেন, 'বিদ্যুৎচালিত নলকূপ দিয়ে জমিতে সেচ দিতে অগ্রিম অর্ধেক টাকা পরিশোধ করতে হয়। বাকি টাকা ফসল ওঠার পর তিন মাসের মধ্যে পরিশোধ করতে হয়। এছাড়া লোডশেডিংয়ের কারণে জমিতে সেচ দিতে না পারার কোনো ভয় থাকে না। ফলে কম খরচে খুব সহজে আমরা ফসল চাষ করতে পারছি।'
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার জাহিদুল করিম জানান, এ বছর উপজেলার হরদেবপুর ভিটশ্বর, রায়গ্রাম, গুমরাইল, হরদেবপুর ও মির্জাপুরে ১৫টি সোলার প্যানেলে আওতায় প্রায় ৭৫০ বিঘা জমিতে ধান চাষ হচ্ছে। সোলার প্যানেলের উদপাদিত শক্তি নবায়নযোগ্য ফলে বিদ্যুৎ ও ডিজেল খরচ সাশ্রয় হচ্ছে। এছাড়া এটা পরিবেশ বান্ধব এবং খুব সাশ্রয়ে যেকোনো কৃষি ফসল উৎপাদন করা সম্ভব।

No comments

Powered by Blogger.