কালীগঞ্জে সদ্য নির্মিত পাঁকা সড়ক সংস্কারের প্রয়োজন

 এম, শাহজাহান আলী সাজু কালীগঞ্জ ঝিনাইদহ ॥
নিম্নমানের ইট বিছিয়ে তৈরী করা হয়েছে পাঁকা রাস্তা। সেই বিছানো ইটের উপর দেওয়া হয়নি কোনো বালু। বালু না থাকায় নির্মানের মাত্র দুই মাসের মধ্যেই ভাংতে শুরু করেছে ইটগুলো। আর আলগা, উচু-নিচু ইটের উপর দিয়ে যানবাহন চলাকালে ঘড়ঘড় শব্দ শুনছে পথচারীরা। কষ্ট করেই চলতে হচ্ছে এলজিইডি’র পক্ষ থেকে সদ্য নির্মিত পাঁকা সড়কটি দিয়ে।
এই বেহাল অবস্থা ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার আলাইপুর জামতলা থেকে চিত্রা নদী পর্যন্ত সড়কটির। স্থানিয়রা বলছেন তারা নিম্নমানের ইট ব্যবহার না করার অনুরোধ করেও ব্যর্থ হয়েছেন। আর অসংখ্যবার ইটের উপর বালু দেওয়ার অনুরোধও করেছেন, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। উল্টো ঠিকাদার এই কাজের চুড়ান্ত বিল উত্তোলন করে নিয়েছেন বলে তারা শুনেছেন।
কালীগঞ্জ উপজেলা এলজিইডি দপ্তরে খোজ নিয়ে জানাগেছে, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার সুন্দরপুর-দূর্গাপুর ইউনিয়নের আলাইপুর ও আলুকদিয়া গ্রামের লোকজনের চলাচলের একমাত্র রাস্তা আলাইপুর জামতলা-চিত্রা নদী রাস্তাটি। এ সড়কটি ইতিপূর্বে কাঁচা ছিল। স্থানিয় এলজিইডি রাস্তাটি পাঁকা করার উদ্যোগ নেন। ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে আই.আর.আই.ডি.পি প্রকল্পের মাধ্যমে রাস্তাটি পাঁকা করার জন্য দরপত্র আহবান করা হয়। দেড় কিলোমিটার রাস্তার কাজের জন্য ৪৫ লাখ ৫৮ হাজার ৪৭৭ টাকা বরাদ্ধ দেওয়া হয়। ২০১৬ সালের ২০ আগষ্ট কাজটি শুরু শেষ সময় ছিল, আর শেষ হবে ২০১৭ সালের ১৯ মার্চ। কাজটি পান ঝিনাইদহের ঠিকাদার মেসার্স কাজী মাহাবুবুর রহমান। কিন্তু ঠিকাদার কাজটি শুরু করতে বিলম্ব করেন। ২০১৮ সালের শুরুর দিকে ঠিকাদার রাস্তা নির্মান শুরু করেন। চলতি বছরের ৩০ মে শেষ করেছেন। আর ১১ জুন চুড়ান্ত বিল উত্তোলন করেছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মাত্র ২ মাস পূর্বে পাঁকা করা এই রাস্তাটি ইতিমধ্যে ভাংতে শুরু করেছে। ইট বিছানো রয়েছে খুবই নিম্নমানের। ইটগুলোই ফাঁকা করে সাজানো হয়েছে। আর এই ফাঁকা স্থান বালি দিয়ে ভরাট করার কথা সেটাও করা হয়নি। যে কারনে যানবাহনের চাক্কায় ইটগুলো ভেঙ্গে যাচ্ছে। অনেক স্থানে নিম্নমানের ইট গুড়ো হয়ে গেছে। আলাইপুর গ্রামের রকি ইসলাম জানান, তারা প্রায় ২ বছর পূর্বে জানতে পারেন রাস্তাটি পাঁকা হবে। কিন্তু কাজ শুরু হচ্ছিল না। অবশেষে কাজটি শুরু হয়। অত্যান্ত নিম্নমানের ইট দিয়ে কাজ করার সময় তারা আপত্তি করেন, কিন্তু ঠিকাদারের লোকজন শোনেনি। সবশেষে ইট বিছিয়ে তার উপর বালু না দিয়ে ঠিকাদার লোকজন ফিরিয়ে নিয়ে যান। তারা এই বিষয়টিও অনুরোধ করেন। বালু দিলে কিছুদিন হলেও রাস্তাটি ভালো থাকবে বললেও ঠিকাদার তা দেননি। বিছানো ইটগুলো আলগা রেখেই কাজ শেষ করেন। এখন ওই ইটের উপর দিয়ে চলাচল করা যাচ্ছে না। আর আলগা ইটগুলো যানবাহনের চাক্কায় ভেঙ্গে গুড়ো হয়ে যাচ্ছে। একই গ্রামের মশিয়ার রহমান জানান, কাজটি এতোটাই নিম্নমানের হয়েছে যে নির্মান শেষ হতে না হতেই চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা এলজিইডি’র উপ-সহকারী প্রকৌশলী অভিজিৎ কুমার বিশ^াস এর সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, জুন মাসে কাজ শেষ করে ঠিকাদার। সেই সময়ে কাজের প্রচন্ড চাপ ছিল। তিনি নিজে না পারলেও অফিসের লোক দিয়ে খোজ নিয়ে চুড়ান্ত বিল তৈরী করেন। কিন্তু পরে জানতে পারেন রাস্তায় বিছানো ইটের উপর বালু দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, ঠিকাদারের জামানতের টাকা রয়েছে। এই টাকা দিয়ে বালু দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন বলে তিনি জানান।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মের্সাস মাহাবুবুর রহমান এর মালিক মাহাবুবুর রহমান জানান, কাজটি তার লাইসেন্সে হলেও মুলত কাজ করেন আবু সাঈদ নামের আরেক ঠিকাদার। সে কাজটি করতে বিলম্ব করেছে। আর এখন বালু দেওয়া হয়নি বিষয়টি তিনি অবগত নন। তবে আবু সাঈদ বর্তমানে হজ্জ করার উদ্দেশ্যে বিদেশে থাকায় তিনি খোজ নিতে পারছেন না। বিষয়টি এমন হলে সাঈদ দেশে ফেরার পর ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।

No comments

Powered by Blogger.