সন্ত্রাসীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আওয়ামীলীগ নেতার মুখ-দাঁত মারাত্বক ভাবে কাটা পড়েছে, বেঁচে থাকতে হচ্ছে চামচ দিয়ে সুজি আর পাইপ দিয়ে জুস খেয়ে

স্টাফ রিপোটার
চামচ দিয়ে রান্না করা সুজি, আর পাইপ দিয়ে জুস খেয়ে বেঁচে আছেন আওয়ামীলীগ নেতা ওসমান আলী। তরল এই খাবারও তার মুখে তুলে দিতে হচ্ছে। সন্ত্রাসীরা ধারালো দাঁ দিয়ে এমন আঘাত করেছে যে তার মুখের বাম চোয়াল কেটে ৫ টি দাঁত কাটা পড়েছে। চোয়াল সেলাই দেওয়া গেলেও দাঁত বাঁচানো সম্ভব হয়নি। বর্তমানে তিনি নিজ বাড়িতেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ পৌরসভা এলাকার বাবরা গ্রামের মৃত আবুল হোসেন বিশ^াসের পুত্র ওসমান আলী বিশ^াস (৪৮)। তার পরিবারের দাবি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা তাকে ঘায়েল করতে কালীগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনের পূর্ব মুহুর্তে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। যারা তাকে হত্যা করতে চেয়েছিল তাদের নামে ইতিমধ্যে মামলা দিয়েছেন, কিন্তু প্রধান আসামী এখনও গ্রেপ্তার হয়নি। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে না পারায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন মামলার দাবি ওসমান আলীর বড় ভাই জয়নাল আলী বিশ^াস।
ভাই জয়নাল আলী বিশ^াস আরো জানান, তার ছোট ভাই ওসমান আলী বর্তমানে সরকারি দলের সঙ্গে যুক্ত। ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সদস্য। তিনি আরো জানান, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি কালীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র পদের উপ-নির্বাচন ছিল। ওসমান ছিলেন নৌকা প্রতিকের প্রার্থী পৌর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফুল ইসলামের পক্ষে। নিজ গ্রাম শুধু নয় পাশ^বর্তী গ্রামের ভোটারদের নৌকার পক্ষে একত্রিত করতে কাজ করে যাচ্ছিল ওসমান। আর এটা দেখে প্রতিপক্ষরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিল।
তিনি আরো জানান, নৌকার প্রতিপক্ষ সরকারি দলেরই বিদ্রোহী প্রার্থী। বাবরা গ্রামে তার যারা সমর্থক ছিলেন তারা পরিকল্পনা করেন ওসমানকে হত্যার। ভোটের আগের রাতে ১ টা ১৫ মিনিটের সময় ওসমান আলী বাড়ির সঙ্গে থাকা মুরগীর খামারে ছিলেন। এ সময় প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসীরা তার উপর হামলা চালায়। এ সময় সন্ত্রাসীরা বেধড়ক পেটাতে থাকে। এক পর্যায়ে ধারালো অস্ত্রদিয়ে তার মাথায় আঘাত করে। এ সময় ওসমান আলী মাথা বাঁচাতে একটু বাঁকা হলে কোপ তার মুখে গিয়ে লাগে। এতে মুখের বাম চোয়াল সম্পূর্ণ কেটে যায়। আঘাতটি এতো মারাত্বক ছিল যে চোয়ালের পাশাপাশি মুখের ৫ টি দাঁত কাটা পড়ে যায়। জয়নাল আলী জানান, এই সময় তার ভাই একটি পুকুরে লাফিয়ে পড়ে প্রান বাঁচান। পরে প্রতিবেশিরা এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে স্থানিয় হাসপাতালে নেন। তার অবস্থা খারাপ হওয়ায় যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসা নিয়ে ৩ মার্চ বাড়ি ফিরেছে। শরীর মারাত্বক অসুস্থ হলেও নিজ এলাকার লোকজনের সঙ্গে থাকার জন্য বাড়ি ফিরে এসেছে।
জয়নাল আলী বিশ^াস জানান, এই ঘটনায় তিনি বাদি হয়ে ১৬ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেছেন। যে মামলার ১৩ জন আদালতে আত্বসমার্পন করেছেন। মামলার প্রধান সহ বাকি তিন আসামী এখনও দাপটের সঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পুলিশ প্রধান আসামীকে আজো গ্রেপ্তার করতে পারেনি। যে কারনে মামলার বিচার নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন জয়নাল আলী।
বিছানায় কাতর ওসমান আলী জানান, রাজনীতির কারনে প্রতিপক্ষরা তাকে হত্যা করতে চেয়েছিল। তিনি বাবরা গ্রামের মানুষের সঙ্গে আছেন, এটা একটি মহল মানতে পারেনি। যে কারনে তারা এই হামলা চালিয়েছে। তিনি বলেন, মুখ দিয়ে শক্ত খাবার খেতে পারছেন না। বাসা থেকে সুজি রান্না করে চামচ দিয়ে খাওয়াচ্ছেন। সঙ্গে পাইপ দিয়ে জুস খেয়ে বেঁচে আছেন। চিকিৎসকেরা বলেছেন এভাবে বেশ কিছু দিন কাটাতে হবে। তিনি দুঃখ করে বলেন জানিনা এভাবে কতো দিন বেঁচে থাকতে হবে। তিনি এই হত্যা চেষ্টার বিচার দাবি করেছেন।
এ বিষয়ে কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইউনুচ আলী জানান, পুলিশের তৎপরতার কারনে আসামীরা আদালতে আত্বসমার্পন করতে বাধ্য হয়েছেন। তবে খোজ পাওয়া যাচ্ছে সব আসামী আত্বসমার্পন করেনি। যারা এখনও বাইরে আছেন তাদের গ্রেপ্তারের জোর চেষ্টা চলছে। আশা করছেন দ্রুতই তারা গ্রেপ্তার হবেন।









No comments

Powered by Blogger.