শোকের মাসে বিনম্র শ্রদ্ধায় বঙ্গবন্ধুর স্মরণে টুঙ্গিপাড়ার সমাধিতে

তরিকুল ইসলাম, ইবিঃ
স্বাধীনতার মহান স্থপতি, বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারবর্গের ৪৪তম শাহাদাত বার্ষিকী আজ ১৫ আগস্ট রোজ বৃহস্পতিবার৷ প্রতিবছর তাই এই দিনটিকে জাতীয় শোক দিবস হিসাবে অবিহিত করা হয় এবং শোকের মাস হিসাবে এই মাসটিকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হয়৷
শোকের এই মাসেই বঙ্গবন্ধুর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে আমাদের ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থীদের পরিচালিত উদ্ভাস ইনভেস্টিগেটর টিম, ইবি এর নিয়মিত সদস্যবৃন্দকে নিয়ে গত ৩ আগস্ট রোজ শনিবার বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত গোপালগন্জের টুঙ্গিপাড়ায় গমন করি৷যা এখন শুধু বঙ্গবন্ধুর সমাধি পরিদর্শন নয় বরং দেশি-বিদেশী পর্যটকদের নিকট একটি ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে৷
আমাদের টিমের সদস্যরা কুষ্টিয়া হতে সকাল ৬:৩০টায় রওয়ানা করে এবং ঝিনাইদহ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে সবাই একত্রিত হই৷ টার্মিনাল থেকে খুলনা টু বরিশালগামী মধুমতি পরিবহণে চড়ে ফরিদপুরের মাইজকান্দি পর্যন্ত যাই৷ মাইজকান্দি হতে আন্ঞ্চলিক সড়ক হয়ে গোপালগন্জের ব্যসপুর বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত এবং ব্যসপুর হতে ভাটিয়াপাড়া মোড় হয়ে মহাসড়ক ধরে গোপালগন্জ শহরে যাই৷ শহর থেকে অটোরিকশায় চড়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ঘুরে টুঙ্গিপাড়া উপজেলার কোটালিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে যাই৷
বাংলাদেশের নিচু অন্ঞ্চলগুলোর মধ্যে একটি গোপালগন্জ৷ অধিকাংশ মানুষ বাড়ি নির্মাণ করেছেন টিন দিয়ে, অবশ্য বর্তমানে দালান বাড়ির সংখ্যা বাড়ছে৷ জেলার ছোট-বড় প্রায় সব সড়কই পাকা৷ পিচ ঢালা সড়কগুলিও যথেষ্ট মজবুত৷ সমাধি থেকে ফেরার পথে গোপালগন্জ দুপুরের খাবার সেরে বাসে চড়ে ভাটিয়াপাড়া আসি৷ ভাটিয়াপাড়া মোড় থেকে কালনা ফেরিঘাটে নড়াইলগামী বাসে চড়ি এবং ফেরি পেরিয়ে সন্ধ্যায় নড়াইল শহরে পৌঁছাই৷ নড়াইল থেকে যশোরগামী বাসে চড়ে যশোর মনিহার, তারপর ট্রেন স্টেশনে এসে ঢাকাগামী ট্রেন সুন্দরবন এক্সপ্রেস এ উঠে কুষ্টিয়ার পোড়াদহ স্টেশনে নামি৷ অবশেষে সিএনজি ভাড়া করে পোড়াদহ থেকে কুষ্টিয়া শহরে গিয়ে আমাদের ভ্রমণ শেষ হয়৷ তবে রয়ে যায় বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি৷
বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে প্রবেশ করেই সবুজ শ্যামল ঘাসাবৃত ছোট্ট প্রাঙ্গন পেরিয়ে দীর্ঘ প্রবেশ পথের দক্ষিণে মসজিদ আর উত্তরে নিচতলায় চমৎকার একটি লাইব্রেরী এবং চারপাশে ও উপরের গ্যালারীতে স্মৃতি সংগ্রহশালা বা জাদুঘর৷ মূল ফটক থেকে ভেতরে প্রবেশ করার পথে দক্ষিণ পার্শ্বে চারিদিকে বৃক্ষাবৃত শান বাধানো পুকুর রয়েছে৷ভেতরে সমাধি কমপ্লেক্সের পাশে একটি ঝর্ণা, পুরাতন বসতভিটা ও পিতৃভূমির নকশাযুক্ত ভবন এবং বঙ্গবন্ধুর পছন্দের আমগাছসহ বাগান আর আত্মীয় স্বজনের করব৷ মূল সমাধির ভেতরে পিতামাতার পাশে শায়িত আছেন বঙ্গবন্ধু ৷১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট ধানমন্ডির বাসভবনে স্বপরিবারে নির্মমভাবে নিগত হওয়ার পর বিশ্বের খ্যাতিমান ব্যক্তিবর্গ বঙ্গবন্ধুর সম্পর্কে যেসব মন্তব্য করেন তার মধ্যে অন্যতম কিছু মন্তব্য লিপিবদ্ধ করছি..
১. মুজিব হত্যার পর বাঙালিদের আর বিশ্বাস করা যায় না, যারা মুজিবকে হত্যা করেছে তারা যেকোন জঘন্য কাজ করতে পারে।— নোবেল বিজয়ী উইলিবান্ট।
২. শেখ মুজিবের মৃত্যুতে বিশ্বের শোষিত মানুষ হারালো তাদের একজন মহান নেতাকে, আমি হারালাম একজন অকৃত্রিম বিশাল হৃদয়ের বন্ধুকে।— ফিদেল কাস্ট্রো।
৩. আপোষহীন সংগ্রামী নেতৃত্ব আর কুসুম কোমল হৃদয় ছিল মুজিব চরিত্রের বৈশিষ্ঠ্য।— ইয়াসির আরাফাত।
৪. শেখ মুজিব নিহত হবার খবরে আমি মর্মাহত। তিনি একজন মহান নেতা ছিলেন। তার অনন্যসাধারন সাহসিকতা এশিয়া ও আফ্রিকার জনগনের জন্য প্রেরণাদায়ক ছিল।— ইন্দিরা গান্ধী।
৫. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হচ্ছেন সমাজতন্ত্র প্রতীষ্ঠার সংগ্রামের প্রথম শহীদ।তাই তিনি অমর।— সাদ্দাম হোসেন।
৬. শেখ মুজিবুর রহমান ভিয়েতনামী জনগনকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন।— কেনেথা কাউণ্ডা।
৭. বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডে বাংলাদেশই শুধু এতিম হয়নি বিশ্ববাসী হারিয়েছে একজন মহান সন্তানকে।— জেমসলামন্ড, ইংলিশ এম পি।
৮.শেখ মুজিবকে চতুর্দশ লুইয়ের সাথে তুলনা করা যায়। জনগন তার কাছে এত প্রিয় ছিল যে লুইয়ের মত তিনি এ দাবী করতে পারেন আমিই রাষ্ট্র।— পশ্চিম জার্মানী পত্রিকা।
৯.আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের মত তেজী এবং গতিশীল নেতা আগামী বিশ বছরের মধ্যে এশিয়া মহাদেশে আর পাওয়া যাবে না।— হেনরি কিসিঞ্জার।
১০.শেখ মুজিব নিহত হলেন তার নিজেরই সেনাবাহিনীর হাতে অথচ তাকে হত্যা করতে পাকিস্তানীরা সংকোচবোধ করেছে।— বিবিসি-১৫ আগস্ট ১৯৭৫৷
বঙ্গবন্ধু আজ নেই, আছে তাঁর স্মৃতিবিজড়িত পিতৃভূমি, আছে স্বাধীন সোনার বাংলা আর বাঙালির হৃদয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ৷ যিনি ছিলেন কৈশরে দূরন্ত, যৌবনে বিপ্লবী , আর পৌঢ়ে বাঙালির মুক্তিকামী মহান নেতা ৷
বঙ্গবন্ধুর নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে অজস্র রোড, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, জাদুঘর, সেতু, ইকোপার্ক আরও কতো কি! কিন্তু বাঙালির হৃদয়ে বঙ্গবন্ধুর মহান আদর্শ সুপ্রতিষ্ঠিত হয়নি আজও৷ শোকের মাসে বঙ্গবন্ধুর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা রেখে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে সোনার বাংলা গড়তে৷ তবেই বাংলাদেশ হবে সুখী সমৃদ্ধ সোনার দেশ, শান্তির পুন্যভূমি৷

No comments

Powered by Blogger.