মাছ আহরনের উপকরন কিনতে ঋণ নিয়ে ব্যাংক কর্তারা মৎস্যজীবীদের দুয়ারে

স্টাফ রিপোর্টার-
কৃষি ব্যাংক কর্মকর্তারা ঋনের টাকা নিয়ে হাজির হয়েছেন মৎস্যজীবীদের দুয়ারে। সল্প সুদে এই ঋণ দিচ্ছেন তারা। আর ঋনের টাকা নিয়ে মৎস্যজীবী বাওড় থেকে মাছ আহরনের উপকরন কিনবেন। এই মাছ ধরেই চলে তাদের সংসার।
মৎস্যজীবীদের ভাষায় তাদের এই ঋণের জন্য মাসের পর মাস ব্যাংগুলোতে ধর্ণা দিতে হতো। এরপরও অনেক সময় ঋণ না পেয়ে মহাজনের কাছ থেকে জাল-দড়া ভাড়া নিয়ে মাছ ধরতে হতো। এতে তারা আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছিলেন। এবার ব্যাংক কর্মকর্তারা বাওড়ের 
পাড়ে এসে মৎস্যজীবীদের হাতে মাছ ধরার জন্য উপকরণ কিনতে ঋণ দিলেন। ঋণ পেয়ে তারা খুবই খুশি। সোমবার সকালে কৃষি ব্যাংকের ঝিনাইদহ মহেশপুর উপজেলা শাখার পক্ষ থেকে এই ঋণ দেওয়া হয়েছে। 
ঋণ পেয়েছেন এমন একজন পুড়াপাড়া গ্রামের বদর উদ্দিন জানান, মহেশপুর উপজেলার স্বরুপপুর ইউনিয়নের পোড়াপাড়া গ্রামের মাঝে রয়েছে পোড়াপাড়া বাওড়। তারা বাওড় পাড়ের বাসিন্দা। সরকারের কাছ থেকে বন্দোবস্ত নিয়ে তারা সমিতির মাধ্যমে এই বাওড়ে মাছের চাষ করেন। তাদের সমিতির নাম পোড়াপাড়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি। এই সমিতির সদস্য সংখ্যা ১৯৭ জন। তিনি এই সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। সমিতিতে যারা আছেন তারা সকলেই দারিদ্রতার সঙ্গে লড়াই করে জীবন-যাপন করেন। এরা বাওড়ে মাছ চাষ এবং সেই মাছ ধরে বিক্রি করেই বেঁচে আছেন।
বদর উদ্দিন আরো জানান, মৎস্যজীবীরা হতদরিদ্র হওয়ায় প্রতিবছর মাছ আহরনের সময় তাদের জাল-দড়া ভাড়া করতে হতো। যে কারনে মাছ বিক্রির একটা অংশ চলে যেতো মহাজনের ঘরে। অনেকে বাইরে থেকে সুদের বিনিময়ে টাকা ধার নিয়ে উপকরণ ক্রয় করেন। যে কারনে তারা ব্যাংকগুলোতে যোগাযোগ করেন মৎস্য আহরনের পূর্বে ঋনের জন্য। অনেক সময় পেতেন আবার অনেক সময় পেতেন না। এভাবে কষ্ট করে তাদের মাছ ধরা মৌসুম পার করতে হতো। তিনি জানান, এ বছর তারা সমিতির পক্ষ থেকে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের মহেশপুর শাখায় যোগাযোগ করেন। ব্যাংক কর্তৃপক্ষও আগ্রহ প্রকাশ করেন এই ঋণ বিতরনে।
কৃষি ব্যাংকের মহেশপুর শাখা ব্যাবস্থাপক আমজাদ হোসেন জানান, মৎস্যজীবী সমিতির সদস্যরা ঋণের জন্য তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরপর ব্যাংকের সকল নিয়ম মেনে প্রতিটি সদস্যকে ১০ হাজার টাকা করে ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সেই অনুযায়ী দাপ্তারিক সব কাজ শেষে ১৮ নভেম্বর ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তিনি বলেন, মৎস্যজীবীরা দরিদ্র এবং ঋণের পরিমান কম হওয়ায় এই ঋণ পেতে তাদের যেন কোনো ব্যয় না করতে হয় সে জন্য ব্যাংকের পক্ষ থেকে বাওড় পাড়ে হাজির হন। পোড়াপাড়া বাওড়ের পাড়ে উপস্থিত হয়ে তারা এই ঋণের টাকা মৎস্যজীবীদের হাতে তুলে দেন।
আমজাদ হোসেন জানান, তারা ১৭০ জন মৎস্যজীবীর হাতে এই টাকা তুলে দিয়েছেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের মূখ্য আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক মোঃ এনায়েত করিম। আরো উপস্থিত ছিলেন, স্থানিয় স্বরুপপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, কৃষি ব্যাংক কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম, আমজাদ হোসেন প্রমূখ। মাত্র ৯% সুদে প্রকাশ্যে এই ঋণ দিচ্ছেন তারা । এক বছরের মধ্যে এই টাকা পরিশোধ করা যাবে।
সমিতির এক সদস্য সিরাজুল ইসলাম জানান, এই টাকা পেয়ে তারা খুবই খুশি। টাকা দিয়ে মাছ আহরনের উপকরন ক্রয় করবেন। এতে তারা আর্থিক ভাবে লাভবান হবেন। তিনি বলেন, ঋণের জন্য অনেক কষ্ট করেছেন। এবার ব্যাংক কর্মকর্তারা ঋণের টাকা নিয়ে তাদের দুয়ারে এসেছেন এটা ভেবে খুব ভালো লাগছে। তবে টাকার পরিমান ১০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২০ হাজার করলে ভালো হতো। কারন বর্তমানে মাছ আহরনের যে উপকরণ তার মুল্যও অনেক বেশি। বিষয়টি ব্যাংক কর্মকর্তারা দেখবেন বলে তিনি আশা করেন।

No comments

Powered by Blogger.