সে দিন প্রতিষ্ঠা করলো ইসলামী বিশ^বিদ্যালয় প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান

বিপ্লব খন্দকার, ইবি:-
সে দিন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ইসলামী বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করলো, এর মধ্যে ৪০ বছর অতিক্রম করে ৪১ বছরে পদার্পণ করেছে?, কত শিক্ষক-শিক্ষাথী আসলো আমাার চোখের সামনে। আজ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ৪১ তম প্রতিষ্ঠতা বার্ষিকী পালিত হচ্ছে কিন্তু জিয়াউর রহমানের নামটা কাউকে স্মরণ করতে দেখছিনা। এমন ধরনের বিভিন্ন অভিমত প্রকাশ করেন এক ভ্যান চালক।
জানা যায়, শুক্রবার (২২ নভেম্বর) দিবসটি উপলক্ষে আনন্দ শোভাযাত্রা, কেক কাটা, আলোচনাসভা, দোয়া-মোনাজাত ও মনঙ্গ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯ টায় প্রশাসন ভবনের সামনে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন ও পতাকা উত্তোলনের মাধ্য দিয়ে দিবসটির কার্যক্রম শুরু করা হয়। শান্তির প্রতিক পায়রা উড়িয়ে আনন্দ শোভাযাত্রা শুরু করা হয়। শোভাযাত্রাটি ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রশাসন ভবনের সামনে এসে মিলিত হয়। এসময় কেক কাটা ও আলোচনা সভায় অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ভিসি প্রফেসর ড. হারুন উর রশিদ আসকারী। বিশেষ অতিথি হিসেবে প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. শাহিনুর রহমান, ট্রেজারার প্রফেসর ড. মোঃ সেলিম তোহা ও রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) এসএম আব্দুল লতিফ। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন ছাত্র উপদেষ্টা ও প্রক্টর (দায়িত্বপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. পরেশ চন্দ্র বর্ম্মন, অনুষদীয় ডিন, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী, ইবির অধীনস্থ আই ইউ ল্যাবরেটরি স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে জুম্মার নামাজের শেষে কেন্দ্রীয় মসজিদে দোয়া-মোনাজাত ও বিকাল ৩ টায় বাংলা মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
সুত্র মতে, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ হিসেবে খ্যাত। প্রায়ত প্রেসিডেন্ট শহীদ জিয়াউর রহমানের হাত ধরে শুরু হয় এর পথচলা। নানা প্রতিকূলতা আর বাধা পেরিয়ে আজকের ইবি দেশের শিক্ষাঙ্গনে অন্যতম জায়গা করে নিয়েছে। ১৯৭৯ সালের ২২শে নভেম্বর কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ জেলার সংযোগস্থলে এর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপিত হয়।
দুই শহর থেকে যথাক্রমে ২৪ ও ২২ কি. মি. দূরে শান্তিডাঙ্গা-দুলালপুরে প্রতিষ্ঠা ফলক স্থাপন করেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট শহীদ জিয়াউর রহমান। তবে দুই দফায় স্থান পরিবর্তন করে এই ক্যাম্পাস। ১৯৮৩ সালের ১৮জুলাই এক অধ্যাদেশে শান্তিডাঙ্গা-দুলালপু থেকে গাজীপুরের বোর্ড বাজারে স্থানান্তর হয় ক্যাম্পাস। জাতীয় সংসদে ১৯৮০ সালের ২৭শে ডিসেম্বর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৮০(৩৭) পাস হলে শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যাবলী পরিচালনায় স্বায়ত্বশাসন প্রদান করা হয়। পরে ১৯৮১ সালে ১লা জানুয়ারি প্রথম ভিসি হিসেবে ড. এ এন এম মমতাজ উদ্দিন চৌধুরীকে নিযুক্ত করা হয়। ১৯৮৫-৮৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে তিনটি বিভাগে আটজন শিক্ষক ও ৩০০ শিক্ষার্থী নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৮৯ সালের ৩রা জানুয়ারি তৎকালীন মন্ত্রিসভার সিন্ধান্ত অনুযায়ী ১৪ই ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ১৯৯০ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়টি গাজীপুর থেকে পুণরায় শান্তিডাঙ্গা-দুলালপুরে ফিরে আসে। এর পর থেকে গুটিগুটি পায়ে এগুতে থাকে শিক্ষা কার্যক্রম। বর্তমানে ৮টি অনুষদভূক্ত ৩৪ বিভাগ রয়েছে। রয়েছে ৪১২ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা, ১৪ হাজার ৪৫৪ ছাত্র-ছাত্রী এবং ৮১৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। পূর্নাঙ্গ আবাসিক ক্যাম্পাস হবার কথা থাকলেও ৪১ বছরে মাত্র ২৭ শতাংশ শিক্ষার্থী আবাসিক সুবিধা পায়। শিক্ষক-কর্মকতাদের আবাসন আছে মাত্র ৫ শতাংশ। বর্তমানে ছাত্রদের ৫টি ও ছাত্রীদের ৩টি আবাসিক হল রয়েছে। শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য রয়েছে ১০টি ভবন।
এছাড়া মেডিক্যাল, জিমনেশিয়াম, লাইব্রেরি আছে একটি করে। প্রায় ১৮ হাজারের এই বৃহৎ পরিবারকে পরিবহন নির্ভর হয়েই দিন কাটাতে হয়। নিজস্ব ও ভাড়া করা গাড়িতেই ভরসা তাদের। বিগত ৪০ বছরে মাত্র ৪টি সমাবর্তন পেয়েছে ইবি। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৭ই জানুয়ারি হয় ৪র্থ সমাবর্তন। ১৬ বছর পরে এতে অংশ নেয় প্রায় ১৮ হাজার গ্রাজুয়েট। প্রতিষ্ঠা থেকে বর্তমানে ১২ জন ভিসি ইবির হাল ধরেছেন। এদের ১১জনকেই নানা অভিযোগে আন্দোলনের মুখে পদ ছাড়তে হয়েছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে রয়েছে ইবির সরব অবস্থান। কালের স্রোতে ৪১ বছরে পা রেখেছে ইবি।
জিয়া পরিষদের সভাপতি প্রফেসর ড. তোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘আজ থেকে ৪০ বছর আগে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এক মহান উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়েকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। দক্ষিণ বঙ্গের মানুষের শিক্ষার উন্নয়ের কথা ভেবে ও ইসলামী শিক্ষায় জাতিকে শিক্ষিত করার জন্য এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। কিন্তু আজ দুঃখের সাথে বলতে হয়, যে মহান ব্যাক্তি এই বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রতিষ্ঠিত করলো তার নাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস থেকে মুছে দেওয়ার জন্য এক শ্রেণির মানুষ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার দিনে প্রতিষ্ঠতার নামও স্বরণ করে না তারা। এটি অত্যন্ত লজ্জাজনক।’

No comments

Powered by Blogger.