স্ত্রী-সন্তানের মুখে দু’বেলা খাবার জোগাড়ের শেষ অবলম্বন ভ্যানটিও দুর্ঘটনায় ভেঙ্গে গেল

স্টাফ রিপোর্টার-
হতদরিদ্র বাবুল আক্তার (৪০) ছিলেন কাঠুরিয়া, কাঠ কাটা ছিল তার কাজ। হঠাৎ একদিন কোমরের উপর গাছ পড়ে চিরদিনের জন্য পঙ্গু হয়ে যান। সংসার বাঁচাতে মানুষের কাছে হাত পাততে হয়, কিন্তু মানুষের কাছে পৌছানোর ক্ষমতা ছিল না বাবুল আক্তারের। শেষে ধার-দেনা করে ব্যাটারী চালিত একটি ভ্যান তৈরী করেন। সেই ভ্যানে করেই মানুষের দ্বারে দ্বারে যেতেন দু’মুঠো খাবার জোগাড়ের আশায়।
রবিবার তার সেই ভ্যানটি এক দূর্ঘটনায় ভেঙ্গে গেছে। স্যালো ইঞ্জিন দিয়ে তৈরী ধান মাড়াই মেশিনে তার ভ্যানটিকে সজোরে আঘাত করে ভেঙ্গে দিয়েছে। অল্পের জন্য তিনি রক্ষা পেলেও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তার আয়ের একমাত্র অবলম্বন ভ্যানটি। ঘটনাটি ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়কের বিষয়খালী নামক স্থানে। ঘটনার পর পঙ্গু বাবুল আক্তারকে দীর্ঘ ৪ ঘন্টা বসে থাকতে হয়েছে। বাড়ি থেকে লোকজন আসার পর তিনি উঠতে পেরেছেন।
বাবুল আক্তার ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার রোকনপুর গ্রামের আনছার আলীর পুত্র। তার স্ত্রী ও তিন মেয়ে রয়েছে। মেয়ে বৃষ্টি ও বর্ষাকে বিয়ে দিয়েছেন। ছোট মেয়ে বন্যা বর্তমানে অষ্টম শ্রেণীতে পড়ছে। বাবুল আক্তার জানান, ইতিপূর্বে তিনি সুস্থ্য ছিলেন। বনজঙ্গলে কাঠ কাটার কাজ করতেন। আনুমানিক সাড়ে ৬ বছর পূর্বে একদিন গাছ কাটা অবস্থায় হঠাৎ মোড়া দিয়ে একটি গাছ তার কোমরের উপর পড়ে। এতে তার মেরুদন্ডে আঘাত লাগে। অনেক চেষ্টা করেও তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ্য হতে পারেননি। সেই থেকে পঙ্গু জীবন যাপন করছেন। .
বাবুল আক্তার জানান, কাঠের কাজ করার সময় যেটুকু পয়সা জমিয়েছিলেন তা দিয়ে তার চিকিৎসা হয়েছে। এমনকি চিকিৎসার জন্য অন্যের কাছেও হাত পাততে হয়েছে। শেষে চিকিৎসা হয়েছেন কিন্তু সারা জীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়েছে। তিনি জানান, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে তার সংসার। পঙ্গু হলেও বেশি দিন বসে থাকতে পারেননি। আবার নিজে কোনো কাজও করতে পারেন না। কিন্তু সংসার চালাতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই। সেই অবস্থায় তিনি স্ত্রী-সন্তানকে বাঁচাতে গ্রামের মানুষের কাছে হাত পাতেন। তারা কিছু সাহায্য দিয়েছিলেন, যা দিয়ে অল্পদিন চললেও এবার তাকে আরো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়। গ্রামের বাইরে মানুষের কাছে হাত পাতেন। কিন্তু মানুষের কাছে যাবেন কিভাবে। তাই কিছু টাকা দিয়ে আর বাকিতে একটি ব্যাটারী চালিত ভ্যান তৈরী করে নেন। যার মুল্য ছিল ৪০ হাজার টাকা। এখনও ৮ হাজার টাকা দোকানে বাকি রয়েছে বলে জানান।
বাবুল জানান, এই ভ্যানে করে তিনি গ্রামে গ্রামে যান, আর সাহায্য চান। এভাবে চলছিল তার সংসার। রবিবার তিনি বাড়ি থেকে বের হয়ে বিষয়খালী বাজারের কাছে একটি গ্রামে যান। বেলা ১ টার দিকে সেখান থেকে বাড়ি ফেরার জন্য ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়কে ওঠেন। রাস্তার এক পাশ দিয়ে যাবার সময় স্যালো চালিত একটি যান নিয়ন্ত্রন হারিয়ে তার ভ্যানে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে তার ভ্যানটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এখন তার একটাই ভাবনা কিভাবে গ্রামে ঘুরবেন, কিভাবে স্ত্রী-সন্তানদের বাচিঁয়ে রাখবেন।
এ বিষয়ে সিমলা-রোকনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাসির চৌধুরী জানান, বাবুল আক্তার খুবই অসহায় একটা মানুষ। ভেঙ্গে যাওয়া গাড়ি তৈরীর সময় তারাও সহযোগিতা করেছিলেন। এখন আবারো গাড়ি তৈরী করা তার পক্ষে কোনো ভাবেই সম্ভব নয়।

No comments

Powered by Blogger.