মৌসুমী ফলগূলি কেন খাবো (দ্বিতীয় পর্ব)

তরিকুল ইসলাম, ইবিঃ
সুস্থ থাকতে, রোগমুক্ত থাকতে চাইলে মৌসুমী ফল খাওয়ার গূরুত্ব অপরিসীম ৷ সৃষ্টিকর্তা তাইতো নানান মৌসুমে নানান ফল আর ফুলের সমাহার ঘটান ৷ পরিমিত ফল প্রতিদিন খেলে যেসব উপকার হয়ঃ
ক. দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়
খ. শরীরের ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ হয়
গ. ভিটামিন এর অভাব পূরণ হয়
ঘ. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে
ঙ. ডায়াবেটিকস এর ঝুকি কমে যায়
চ. লৌহ ও খনিজ লবণের ঘাটতি থাকে না প্রভৃতি ৷
আমাদের দেশে সহজলভ্য এমন পাঁচটি ফল নিয়ে গত পর্বে আলোচনা করেছি ৷ এই পর্বে আরও পাঁচটি ফলের কথা আলোচনা করা হলঃ
এক. কমলা
লেবু জাতীয় ফল কমলা উপমহাদেশের জনপ্রিয় ফল ও পথ্য হিসেবে সুপরিচিত ৷ কথিত আছে, ভাস্কো দ্য গামা এই ফলটি ভারত থেকে ইউরোপে নিয়ে গিয়েছিলেন ৷ টক, মিষ্টি ও ম্যান্ডারিন কমলার মধ্যে মিষ্টি জাতীয় কমলার চাহিদাই বেশি ৷ কমলার ইংরেজি নাম Mandarin orange or Mandarine এবং বৈজ্ঞানিক নাম Citrus reticulata.
বরফহীন অথচ গ্রীষ্মে প্রখর তাপ এবং শীতে প্রচন্ড শীত এমনস্থানে কমলার উৎপাদন ভালো হয় ৷ পৃথিবীতে প্রতি বছর প্রায় চার কোটি টন কমলা উৎপাদন হয়, যার মধ্যে ব্রাজিল, যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোতে সর্বাধিক ৷ কমলা থেকে রস, জুস এবং জ্যাম-জেলি প্রস্তুত করা হয় ৷ বাংলাদেশে সিলেটে বেশ ভালো কমলা উৎপন্ন হয় ৷ ভিটামিন সি'সহ বিভিন্ন ভিটামিনে পূর্ণ কমলার জুস অপেক্ষা পাঁকা কমলাই শ্রেয় ৷
দুই. আনারস
আনারস একটি সুপরিত ফল যা বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের মধুপুর এবং পাহাড়ী অন্ঞ্চলে বেশি পাওয়া যায় ৷ তবে পাহাড়ী আনারসের স্বাদ অতুলনীয় ৷ বাংলাদেশের হাট-বাজারে গ্রীষ্ম-বর্ষায় জনপ্রিয় ফল হিসেবে পরিচিত, অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি মৌসুমী ফলের কদর হিসেবে আভিজাত্য এনে দেয় এটি ৷ গুচ্ছ প্রকৃতির ফল আনারসের ইংরেজি নাম Pineapple এবং বৈজ্ঞানিক নাম Ananas comosus (L.).
আনারস একদিকে শরীরে পানির চাহিদা পূরণ করে, অন্যদিকে পুষ্টির অভাব দূর করে ৷ আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ এবং সি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ এবং ফসফরাস ৷ ওজন নিয়ন্ত্রণেও আনারস বেশ সহায়ক ভূমিকা পালন করে ৷ ক্যালসিয়াম ও ম্যাঙ্গানিজ হাড়ের গঠন, দাঁতের সুরক্ষা এবং মাড়ির প্রদাহকে জীবাণুর সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে ৷ এছাড়াও বদহজম ও হজমজনিত সমস্যা এবং শরীরে রক্ত প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে হৃৎপিন্ডকে সচল রাখে আনারস ৷
তিন. আমড়া
ভিটামিন সি'সমৃদ্ধ ফলের নাম বলতেই প্রথমে যে ফলটির নাম মাথায় আসে, তার নাম আমড়া ৷ এটি গ্রামীণ মানুষের নিকট গোল্ডেন আপেল হিসেবে সুপরিচিত, যার বৈজ্ঞানিক নাম Stondia Dulcis. বাংলাদেশে দু' প্রজাতির আমড়া পাওয়া যায় ৷ সেগুলো হল দেশি আমড়া ও বিলাতি আমড়া ৷ দেশি আমড়া প্রচন্ড টক স্বাদের হয়, বিলাতি আমড়া টক-মিষ্টী স্বাদযুক্ত ৷ এটি আকারে দেশি আমড়া অপেক্ষা বৃহৎ এবং আঁশযুক্ত ৷ আমড়া থেকে সুস্বাদু আচার, চাটনি এবং জেলি তেরি করা যায় ৷
প্রতি ১০০ গ্রাম আমড়ায় জলীয় অংশ ৮৩ শতাংশ, খনিজ উপাদান ০.৬ ভাগ, লৌহ ০.৪ ভাগ, আঁশ ০.১ ভাগ, আমিষ ০.১ ভাগ, শর্করা ১৫ ভাগ, এবং ০.৬ ভাগ ক্যালসিয়াম বিদ্যমান ৷ এসব উপাদান শরীরের জন্য খুবই উপকারী ৷ এতে প্রচীর পরিমাণে ভিটামিন থাকায় স্কার্ভি রোগ প্রতিরোধ করে ৷ এছাড়াও হজমি শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি নানা ধরণের ইনফেকশন থেকে বাঁচিয়ে দেয়৷ সর্দি কিশি উপশমে আমড়া খেলে দ্রুত আরোগ্য লাভ হয় ৷
চার. তরমুজ
পানিসমৃদ্ধ ফলের মধ্যে তরমুজ শীর্ষে ৷ রসালো মিষ্টি স্বৎদের তরমুজে ক্যালরি কম থাকিয় ওজন নিয়ন্ত্রণে তরমুজ বেশ সহায়ক ৷ পানির অভাব পূরণের জন্য আদর্শ ফল তরমুজের ৯২ শতাংশই পানি ৷ যার ইংরেজী নাম Citrullus এবং বৈজ্ঞানিক নাম Citrullus lanatus.
গ্রীষ্মকালে সতেজ থাকতে তরমুজ অনবদ্য, মৌসুমী এই ফলটির রয়েছূ নানান উপকারিতা ৷ এছাড়াও তরমুজে আছে পর্যাপ্ত ভিটামিন এ, সি, পটাশিয়াম ও আঁশ ৷ ভিটামিন বি'৬ এর অন্যতম উৎস তরমুজ, যা মষ্স্তিষ্ক সচল রাখতে বেশ সহায়ক ৷ ফলে তরমুজকে মাথা ঠান্ডা রাখার ফলও বলা যেতে পারে ৷
তরমুজে ক্যারোটিনয়েড থাকায় রাতকানা প্রতিরোধসহ, চোখ ও দৃষ্টিশক্তি ভাল রাখতে এর প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য ৷ চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, তরমুজে প্রচুর পরিমাণে সিট্রুলিন থাকায় মানব দেহের ধমনির কার্যক্রম স্বাশভাবিকরাখতে এবং রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে ৷
পাঁচ. পেঁপে
বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় দু'চারটি পেঁপে গাছের দেখা মিলবেই ৷ যা শুধু ফল হিসেবে নয়, তরকারি হিসেবেও ব্যাপক চাহিদাসম্পন্ন ৷ এমনকি রোগীর পথ্য খাবার হিসেবে পেঁপের চাহিদা অনেক ৷ পাঁকা পেঁপে খেতে চায় না এমন মানুষের দেখা ভার ৷ সব ধরণের মানুষ সুস্থ কিংবা অসুস্থ সকল অবস্থায় পেঁপে খেতে প্রস্তুত ৷ তাছাড়া কাঁচা পেঁপে ঝালাই বা সালাদ করে খাওয়ার চাহিদাও রয়েছে ৷ পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণে পানি, এন্টি-অক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন রয়েছে ৷ এটি ভিটামিনের স্টোর হিসেবেও পরিচিত ৷ পেঁপের ইংরেজি নাম Papaya এবং বৈজ্ঞানিক নাম Carica papaya.
পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণে ক্যোরোটিন থাকায় মেদ সমস্যা সমাধানে সহায়ক, এছাড়াও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ ও সি থাকায় চোখের সমস্যা ও সর্দিকাশিতে কাজে লাগে ৷ নিয়মিত পেঁপে খেলে হার্ট এটাক, স্ট্রোক, কোষ্ঠকাঠিন্য, বুক জ্বালাপোড়া, গ্যাস্টিক, পেট ব্যাথা, অজীর্ণ, কৃমি সংক্রমণ, আলসার, আলসার ও কিডনি রোগের ক্ষেত্রে প্রহরী হিসেবে কাজ করে ৷ প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা পেঁপেতে ৭.২ গ্রাম শর্করা, ৩২ কিলোক্যিলরি খাদ্যশক্তি, ০.৮ গ্রাম আঁশ. ০.৬ গ্রাম আমিষ, ০.৫গ্রাম খনিজ লবণ, ৬ মিলিগ্রাম সোডিয়াম, ৭০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম এবং ০.৫ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে ৷ পেঁপে কাচা হোক কিংবা পাঁকা পুষ্টিগুণে ভরপুর ফলটি নিয়মিত খাওয়া উচিত ৷

তথ্যসূত্রঃ ইউকিপিডিয়া ও ফলদ উদ্ভিদ পরিচিতি ৷
লেখকঃ তরিকুল ইসলাম মাসুম
শিক্ষার্থী, ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ৷

No comments

Powered by Blogger.