মানুষ হিসেবে শ্রেষ্ঠত্বের পরিচয় শাশ্বত হয়ে থাক কাল থেকে কালান্তরে


এম এ কবীর

সাংবাদিক-

সমাজ মূলত এমন একটি ব্যবস্থা, যেখানে একাধিক চরিত্র একত্রে কিছু নিয়ম-নীতি প্রতিষ্ঠা করে একত্রে বসবাসের উপযোগী পরিবেশ গড়ে তোলে। আর রাষ্ট্র হচ্ছে সমাজের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গোষ্ঠী। সমাজের সদস্যদের নিয়ম ও বিধিমালা তৈরীর ক্ষমতা রাষ্ট্রের হাতেই ন্যস্ত । তাই মানুষের প্রয়োজনেই আইন তৈরি হয়। সমাজ বা রাষ্ট্রে যখন যে বিষয়ে অন্যায় বেড়ে যায় তখনই কেবল ঐ বিষয়ে আইন প্রণয়ন এবং তার যথাযথ প্রয়োগের প্রয়োজন পড়ে। 

আইনবিদ স্যামন্ড এর মতে, ‘ আইন হলো ন্যায় প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত ও প্রয়োগকৃত নীতিমালা ’।

অধ্যাপক হল্যান্ড বলেছেন, ‘ আইন হলো মানুষের বাহ্যিক আচরণের নিয়ন্ত্রণ বিধি যা সার্বভৌম কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বলবৎ করা হয়।’

এক চাকায় কখনো রথ চলে না। নীতিহীন রাজা অপেক্ষা রাজা না থাকাও ভাল।

জোহরা বেগম কাজী ১৯১২ সালের ১৫ অক্টোবর অবিভক্ত ভারতের মধ্য প্রদেশের রাজনান গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম ডাক্তার কাজী আব্দুস সাত্তার ও মায়ের নাম মোসাম্মদ আঞ্জুমান নেসা। তার আদি পৈত্রিক নিবাস বাংলাদেশের মাদারীপুর জেলার কালকিনি থানার গোপালপুর গ্রামে। তিনি ১৯২৯ সালে আলিগড় মুসলিম মহিলা স্কুল থেকে প্রথম বাঙালি মুসলিম আলিগড়িয়ান হিসাবে এসএসসি পাস করেন। ২৩ বছর বয়সেই তিনি দিল্লির ‘লেডি হাডিং মেডিকেল কলেজ’ থেকে ১৯৩৫ সালে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে এমবিবিএস পাস করেন। এজন্য পুরস্কার হিসেবে পান ভাইসরয় পদক।

১৯৩৫ সালে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করার পর জোহরা বেগম কাজী কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। তিনি প্রথমে ইয়োথমাল ওয়েমেন্স (পাবলিক) হাসপাতালে ডাক্তার হিসেবে যোগ দেন। 

এরপর বিলাসপুর সরকারি হসপিটালে যোগ দেন। পরবর্তীকালে মানুষের সেবার জন্য মহাত্মা গান্ধী নির্মাণ করেন সেবাগ্রাম। এই সেবাগ্রামে অবৈতনিকভাবে কাজ করেন জোহরা বেগম কাজী। এছাড়া তিনি ভারতের বিভিন্ন বেসরকারি ও সরকারি প্রতিষ্ঠানে ডাক্তার হিসেবে নিরলসভাবে কাজ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর তিনি ঢাকায় চলে আসেন। ১৯৪৮ সালে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যোগ দেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত অবস্থায় অবসর সময়ে তিনি সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে অনারারি কর্নেল হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেন। মিডফোর্ড মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি গাইনোকোলজি বিভাগের প্রধান ও অনারারি প্রফেসর ছিলেন। ১৯৭৩ সালে চাকরি থেকে অবসর নেবার পর বেশকিছু বছর হলিফ্যামিলি রেডক্রিসেন্ট হাসপাতালে কনসালটেন্ট হিসাবে চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন। পরবর্তীকালে তিনি বাংলাদেশ মেডিকেলে অনারারী অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেন।

ঢাকা মেডিকেলে দায়িত্ব পালন করার সময় নারী রোগীদের চিকিৎসা সংক্রান্ত কুসংস্কার তাকে আহত করে। তিনি তাদের সাথে সরাসরি কথা বলে তাদের ভুল ধারণা দূর করতেন। তার কারণে পরবর্তীতে চিকিৎসা শাস্ত্রে এদেশে মেয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বৃদ্ধি পায়। দীর্ঘ কর্মময় জীবনের স্বীকৃতি হিসেবে পান একুশে পদক, রোকেয়া পদক ও বিএমএ স্বর্ণপদক। তিনি ২০০৭ সালের ৭ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। 

শ্লীলতাহানী অত্যন্ত নিকৃষ্ট ও জঘন্য একটি অপরাধ। মস্তিষ্ক-বিকৃতরাই এমন অপরাধের সঙ্গে জড়িত হতে পারে। 

ইসলামে এর শাস্তি অত্যন্ত কঠিন। দুনিয়া ও পরকালÑ উভয় জগতে শাস্তি রয়েছে। দুনিয়ার শাস্তি হলোÑ তার চেহারার সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাবে। পরিবারে দরিদ্রতা আসবে, সামাজিকভাবে অপদস্থ হবে। আর শরীয়া আইনে তাকে বেত্রাঘাত বা পাথর মেরে হত্যা করা হবে। 

পরকালে প্রথমতঃ কবরে শাস্তি পাবে। হিসাব-নিকাশ কঠোর হবে। 

আল্লাহ তা’য়ালা  সুরা বনি ইসরাইলের ৩২ নং আয়াতে বলেছেন,

 ‘ তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেও না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ।’ 

এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করায় জাহান্নামে শাস্তি ভোগ করবে।

 সম্প্রতি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন করে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদ-ের বিধান দিয়েছে সরকার। তবে প্রতিরোধে যেমন শাস্তির প্রয়োজন তেমনি সচেতনতা আরও বেশি প্রয়োজন। লক্ষ্য করুন, একজনের শাস্তি হলো, কিন্তু অন্যজনের জীবনে একটি দাগ রয়েই গেল। 

ইসলামে নারীকে যথাযথ মর্যাদা ও অধিকার দেয়া হয়েছে। নারীর অধিকার ও মর্যাদা এত বেশি যে, পবিত্র কোরআনে শুধু মাত্র ‘নারী’দের নামে একটি সুরা নাজিল করা হয়েছে। সুরাটি হলো- ‘নিসা’। 

ইসলামের আগে পৃথিবীতে এমন একটি অবস্থা ছিল, সমাজে নারীদের সম্মান বলতে কিছুই ছিল না। নারীর মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। তাদের সঙ্গে অমানবিক ও নিষ্ঠুর ব্যবহার করা হতো। এমনকি তাদের জীবন্ত মাটিতে পুঁতে রাখার ঘটনাও ছিল। 

এই অবস্থায় নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে এলেন মহানবী (সা.)।

 মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে তিনি নারীদের অধিকারের কথা ঘোষণা করলেন। তাদের সম্মান বাড়িয়ে দিলেন। 

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নারীদেরও রয়েছে অধিকার পুরুষের ওপর, যেমন পুরুষের অধিকার রয়েছে নারীদের ওপর।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২২৮)। 

রাসুল (সা.) বলেন, ‘ যার তিনটি, দুটি অথবা একটি কন্যা সন্তান রয়েছে, তার জান্নাত নিশ্চিত হয়ে যায়।’ 

স্ত্রীদের বিষয়ে কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের সঙ্গে সদাচরণ করো।’ 

তা ছাড়া মা হিসেবে নারীদের সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদা দেয়া হয়েছে।

ইসলাম পুরুষদের দৃষ্টি সংযত রাখার নির্দেশ দিয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন,

 ‘হে নবী আপনি মুমিন পুরুষদের বলুন, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাজত করবে। এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র। নিশ্চয়ই তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত।’  (সুরা আন-নূর আয়াত- ৩০)

সমাজে এক শ্রেণির মানুষ আছে যাদের পায়ের নিচে মাটি নেই। কিন্তু জাহির করে গোটা দুনিয়াটাই তার। তাকে নিয়ে লোকে হাসে। এটা সে-ও বোঝে। কিন্তু না বোঝার ভান করে। মনে করে বলুক না, যা বলার। তাতে আমার কি? আমিতো ভালই আছি। 

ওই মুচির কাহিনীর মতোই ঘটনা। এক মুচি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। অপর পাশ দিয়ে আসছেন আরেক ব্যক্তি। কোন কিছু নিয়ে দু’জনের মধ্যে হলো কথা কাটাকাটি। এক পর্যায়ে মুচির ওপর চড়াও হলো ওই ব্যক্তি। একের পর এক কিল, ঘুষি, থাপ্পড় দিচ্ছে আর মুচি বেচারা বলছেন, ‘আরেকটা দিয়ে দ্যাখ। আরেকটা দিয়েই দ্যাখ।’

গ্রামে একটি প্রবাদ আছে, এক মণ দুধে এক ফোটা চনা মানে গরুর মূত্র পড়লে সবই শেষ। দুধ আর দুধ থাকে না।


এখন ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ-। তারপরও আন্দোলন কেন? তাহলে কি আট একে সাত হয়েছে? কিছু না ভেবেই মৃত্যুদ- চাওয়া হয়েছিল? এখন ভাবনা আরও বেড়েছে।

ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডের বিধানটি তাৎক্ষনিকভাবে ইতি বাচক ফল দেবে এমন আশাবাদ করাই যেতে পারে। 

তবে তা মূল ব্যাধি নিরাময়ে ভেকসিন হিসেবে দেখা ঠিক হবে না। কারন নারী নির্যাতন বা নারী পচারের মত সামাজিক অপরাধের উৎসমূল উপড়ানো না গেলে দৃশ্যত কঠোর আইনও এক সময় গা সওয়া ও অপর্যাপ্ত বলে মনে হবে। আইনটি জরুরী ভিক্তিতে কার্যকর হওয়ায় ধর্ষণের মত অপরাধ সংঘটিত হলে স্থানীয় মোড়ল মাতব্বর বা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীদের অতি তৎপরতা আশংকাজনকভাবে বাড়তে পারে। ফলে আক্রান্তরা চূড়ান্ত আইনি প্রক্রিয়ায় ন্যায় বিচার না পাওয়ার অনিশ্চয়তায় পড়ে যেতে পারে। 

মানবজাতির যে সম্মান ও মর্যাদার ঘোষণা ইসলামে দেয়া হয়েছে সে সম্মান ও মর্যাদা লাভের ব্যাপারে নারী-পুরুষে কোনো ভেদাভেদ করা হয়নি। 

মহান আল্লাহ বলেন, ‘ আমি তো আদম-সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি, স্থলে ও সমুদ্রে তাদের চলাচলের বাহন দিয়েছি, তাদের উত্তম রিজিক দান করেছি এবং আমি যাদের সৃষ্টি করেছি তাদের অনেকের ওপর তাদের শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি।’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত ৭০)

বিশ^াসের স্বাধীনতা নারীর ব্যক্তিত্বকে সমুজ্জ্বল করেছে। ফিরাউনের স্ত্রী আসিয়া যিনি বিশ^াসী ছিলেন। হজরত মরিয়ম বিশ^াসী ছিলেন। আল্লাহর কাছে প্রিয় নবী (সা.) এঁর যুগে রামলা বিনতে আবু সুফিয়ান পিতার মতো অবিশ^াসী ছিলেন না। হজরত খাদিজা (রা.) নারী হিসেবে প্রথম ইসলাম গ্রহণকারীর গৌরব গ্রহণ করেন।

 বিয়েতে নারীর অনুমতি প্রথম নেয়া হয় এমনকি নারীর অনুমতি ছাড়া বিয়ে বৈধতা পায় না। নারীর রয়েছে উপার্জন করার অধিকার এবং নিজ পছন্দমতো ব্যয় করার স্বাধীনতা। রসুল (সা.) এঁর স্ত্রী জয়নব বিনতে জাহাশ (রা.) কুটিরশিল্পে পারদর্শী ছিলেন এবং এর উপার্জন তিনি আল্লাহর পথে ব্যয় করতেন। 

মহান আল্লাহ বলেন, ‘পুরুষ যা অর্জন করে তা তার প্রাপ্য এবং নারী যা অর্জন করে তা তার প্রাপ্য।’ (সুরা, নিসা, আয়াত ৩২)।

 নারী-পুরুষের যৌথ প্রয়াস একটি সমাজ রচনা করবে এটাই কাম্য। সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকান্ডে নারীর অংশগ্রহণ নারীর মানবীয় প্রকৃতি, মর্যাদা, নিরাপত্তা ও অধিকার সংরক্ষণ করে। পক্ষান্তরে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা,  উচ্ছৃঙ্খলতা ও বন্ধনহীন সম্পর্ক নারীকে দুর্বল করে তোলে। 

নারীর প্রতি সহিংসতার মূলে রয়েছে বৈষম্য। সহিংসতার প্রকৃতি হতে পারে শারীরিক ও মানবিক। এসব ঘটতে পারে ঘরে অথবা বাইরে। ক্রমবর্ধমান হারে রয়েছে ইভ টিজিং, নারী পাচার, অ্যাসিড নিক্ষেপ, অপহরণ, যৌতুক, হত্যার মতো অপরাধ। জন্মের দিন থেকে জীবনের শেষ পর্যন্ত নারী ঝুঁকির বাইরে নয়। নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে নারী-পুরুষের নৈতিক শিক্ষা, ইসলামের প্রকৃত জ্ঞান অনুশীলন প্রয়োজন। নারী-পুরুষের সম্পর্ক সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘ মুমিন নরনারী একে অন্যের বন্ধু, এরা সৎ কাজের নির্দেশ দেয়, অসৎ কাজে নিষেধ করে, সালাত কায়েম করে, জাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও রসুলের আনুগত্য করে।’ ( সুরা তওবা, আয়াত- ৭১)।

কাজ করতে গেলে ভেবে চিন্তে এগোতে হয়। চলার পথে ভুল করা যায় না। 

একজন শিক্ষক তার ক্লাসে ব্লাকবোর্ডে আট-এর নামতা লিখছেন। তিনি লিখলেন, আট একে সাত, আট দুগুনে ষোল, তিন আট টা চব্বিশ, চার আট টা বত্রিশ, পাঁচ আট টা চল্লিশ, ছয় আট টা আটচল্লিশ, সাত আট টা ছাপ্পান্ন, আট আট টা চৌষট্টি, আট নয় বাহাত্তর, আট দশে আশি।

 শিক্ষক বোর্ডে লিখে পেছন ফিরে দেখলেন শিক্ষার্থীদের কেউ হাসছে। কেউ টিপ্পনি কাটছে।

এবার শিক্ষক শিশু শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বললেন, শোন আমি ইচ্ছে করেই নামতা লিখতে ভুল করেছি।

 এখানে দশটি নামতার একটি ভুল হয়েছে। বাকি নয়টি কিন্তু ঠিক আছে। এই একটি ভুলের জন্যই তোমরা কেউ হাসছো, কেউ কানাঘুষা করছো। 

জীবনে চলার পথটাও এরকম। তুমি চলার পথে হাজারটা ভাল কাজ করেছ, একটি ভুল করলে সব শেষ। এই একটি ভুল নিয়ে তোমার সমালোচনা করবে। এত যে ভাল কাজ করেছ তার কোন প্রশংসা পাবেনা। আমি নয়টি নামতা ঠিক করেছি এর জন্য  তোমরা আমাকে ধন্যবাদ দাওনি। একটি ভুল তোমাদের মনে গেঁথে গেছে। সমাজ সংসারও ঠিক তেমনই। 

সত্যিই আমরা কি ভেবেচিন্তে এগুচ্ছি? চারদিকে তাকালে দেখা যায় ভুল আর ভুল। শুদ্ধ নয় কিছুই। নিজের স্বার্থ ঠিক রেখে সামনে এগিয়ে যায় সবাই। কে কি বলল, সেদিকে তাকানোর ফুরসৎও নেই।

 সমাজে আরেকটি জিনিষ খুব বেশি দেখা যায়, নিজেকে মেলে ধরার প্রবণতা। নিজে যা পারবে তা-ও বড়াই করে বলা। যা না পারবে তা-ও বলা। এরা নিজেদের খুব চালাক ভাবে। মনে করে, আমি যা বলছি বা করছি তা  কেউ বুঝছে না। সাধারণ মানুষ সব বোকা।

হজরত হুজাইফা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ তোমরা অন্যদের দেখাদেখি কাজ করো না। অর্থাৎ, এমন বলো না যে, যদি মানুষ আমাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে তবে আমরাও তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করব। বরং তোমরা নিজের এই কথার ওপর দৃঢ় থাকো যে, লোকেরা যদি ভালো ব্যবহার করে তবে তোমরাও ভালো ব্যবহার করবে। আর যদি খারাপ ব্যবহার করে তবুও তোমরা জুলুম করবে না।’ (তিরমিজি : ২০০৭)  

আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘ যদি প্রত্যেক গোনাহগারের কাছে এত পরিমাণ (সম্পদ) থাকে যা আছে সমগ্র জমিনের মাঝে, আর যদি সেগুলো নিজের মুক্তিপণ হিসেবে দিতে চায় আর মনে মনে অনুতাপ করতে থাকে, যখন সে আজাব দেখবে! (তখন সে মুক্তিপণ বা অনুতাপ কোনো কাজে আসবে না)। আসলে তখন তাদের জন্য সিদ্ধান্ত হবে ন্যায়সঙ্গত এবং তাদের ওপর জুলম হবে না। শুনে রাখো, যা কিছু রয়েছে আসমানে ও জমিনে সবই আল্লাহর। শুনে রাখ, আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য। তবে অনেকেই জানে না।’ (সুরা ইউনুস : ৫৪-৫৫) 

নদীর তীরে দাঁড়িয়ে এক পাগল ছয় ছয় বলেই যাচ্ছিল। একজন লোক তার কাছে গিয়ে বলল, তুমি এভাবে ছয় ছয় ছয় করছ কেন? পাগল ধাক্কা মেরে তাকে নদীতে ফেলে দিল। এরপর মনের আনন্দে বলতে শুরু করল, সাত সাত সাত। 

সামাজিক সকল অপরাধ থেকে দূরে থেকে,মানুষ হিসেবে শ্রেষ্ঠত্বের পরিচয় শাশ^ত হয়ে থাক কাল থেকে কালান্তরে। কেটে যাক অন্ধকার। অন্ধকার পেরিয়েই তো আলো আসে। অধ্যাপক ড.মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী ‘ মানুষের জলছবি ’ কাব্যগ্রন্থে লিখেছেন,

 “ যদি সন্ধান মেলে কোন নির্ভেজাল মানব-মানবীর

ভেতরের অন্ধকারকে শুকনো কাঠের মত পুড়িয়ে 

আসে আবার রোদে ঝলসানো স্বর্ণলতার ভোর

অপেক্ষার পর অপেক্ষা যদি আসে চাঁদনী প্রহর।"


এম এ কবীর

সাংবাদিক,কলামিস্ট

গবেষক, সমাজচিন্তক

trynew70@gmail.com


No comments

Powered by Blogger.