এক ঠিকাদারের নামে ক্ষুদ্র সড়ক মেরামতের অধিকাংশ কাজ, সব দপ্তরে থাকলেও দরপত্র আহবানে সওজে নেই এলটিএম পদ্ধতি

স্টাফ রিপোর্টার- 

ঝিনাইদহ সড়ক ও জনপথ বিভাগ পিএমপি ক্ষুদ্র সড়ক মেরামত কাজে ১২ গ্রুপে প্রায় ৬ কোটি টাকার দরপত্র আহবান করা হয়েছে। যার সবগুলোই পেয়েছেন একজন ঠিকাদার। আমিনুল হক নামের ওই ঠিকাদার খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় একই প্রকল্পে প্রায় ১ শত গ্রুপ কাজের অধিকাংশই পেয়েছেন। ঠিকাদাররা বলছেন, খুলনা বিভাগ নয় গোটা দেশের ৬৪ টি জেলাতেই এই প্রকল্পের বেশির ভাগ কাজ তার লাইসেন্সে দেওয়া হয়েছে। তাদের দাবি আমিনুল হক প্রাইভেট লিমিটেড নামের এই প্রতিষ্ঠান বর্তমানে গোটা দেশে প্রায় ২ হাজার ৫ শত কোটি টাকার কাজ করছেন। 

সওজের কর্মকর্তারা বলছেন, সড়ক বিভাগের বেঁধে দেওয়া ম্যাট্রিক্স পদ্ধতির কারনে যোগ্যতার মাপকাটি তার পক্ষে থাকায় পিএমপি (পিরিয়ডিক মেইন্টেন্যান্স প্রোগ্রাম) সড়ক ও মহাসড়ক এর মাইনর কাজগুলোর বেশির ভাগ তিনিই পাচ্ছেন। দেশের সব এলাকাতেই তার লাইসেন্সে কাজ চলছে। যে কাজগুলো তিনি ছোট ছোট ঠিকাদার দিয়ে সম্পন্ন করাচ্ছেন। অবশ্য আমিনুল হক দাবি করেছেন তার লাইসেন্স অনেকে ব্যবহার করে কাজ করছেন। এটা সম্পর্কের কারনে দিয়েছেন। কাজ বিক্রি করছেন এটা ঠিক নয়। দাবি করেন, শুধু তিনি একাই কাজ পাচ্ছেন এটা ঠিক নয়, অন্যরাও কিছু কিছু পাচ্ছেন।

সাধারণ ঠিকাদারদের বক্তব্য যেগ্যতা যাচাই এর এই পদ্ধতি আসলে কতটুকু কার্যকর হচ্ছে। একজন ঠিকাদারকে দেশের ৬৪ টি জেলায় কাজ দেওয়া হচ্ছে। যা বিক্রির মাধ্যমে ছোট ছোট ঠিকাদারদের হাতে চলে যাচ্ছে। আর যারা কাজ ক্রয় করছেন তারা যোগ্যতার কারনে দরপত্রে অংশই নিতে পারছেন না। তাছাড়া সরকারের অন্য সকল দপ্তর দরপত্র আহবানের ক্ষেত্রে এল.টি.এম (সকল লাইসেন্স মালিক অংশ নিতে পারবে) পদ্ধতি ব্যবহার করলেও সড়ক বিভাগ তা করছে না। ফলে ছোট ঠিকাদাররা কাজ না পেয়ে বেকার হয়ে পড়ছেন, পাশাপাশি নতুন ঠিকাদার তৈরী হচ্ছে না। আর যারা অধিক টাকা দিয়ে কাজ কিনে করছেন তারা কাজের মান ধরে রাখতে পারছেন না। 

সড়ক বিভাগের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বললে তারা নাম প্রকাশ না করে জানান, অন্য সব দপ্তরগুলো উন্নয়ন কাজে দরপত্র গ্রহনের ক্ষেত্রে একাধিক পদ্ধতি গ্রহন করলেও সওজ এলটিএম পদ্ধতি গ্রহন করেন না। কাজের গুনগত মান ধরে রাখতে ঠিকাদার নির্বাচনে তারা কিছু নিয়ম মেনে চলেন। তারা ক্ষুদ্র মেরামতের ক্ষেত্রে ওটিএম (অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ঠিকাদারের অংশ গ্রহন) পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকেন। এই ক্ষেত্রে ঠিকাদারের পূর্ববর্তী কাজের অভিজ্ঞতা, কত বেশি টাকার কাজ করেছেন এবং কত বেশি কাজ চলমান আছে এ সকল দিক বিবেচনা করে থাকেন। আর এ সব কারনে গত তিনটি অর্থ বছর এই বিভাগ থেকে আহবানকৃত টেন্ডার একজন করে ঠিকাদারই বেশি পেয়ে যাচ্ছেন। ওই কর্মকর্তারা আরো জানান, গত দুইটি অর্থ বছরে মোজাহার এন্টার প্রাইজ, মঈন উদ্দিন বাশি, রানা বির্ল্ডাস এরা বেশি কাজ করেছেন। এ বছর নওগা জেলার বাসিন্দা আমিনুল হক সব কাজ পেয়ে যাচ্ছেন। তারা দাবি করেন, সংশ্লিষ্ট বিভাগ ভালোর জন্য এই নিয়ম মেনে চলছেন। কাজের মান ধরে রাখতেই এটা করা হচ্ছে। তবে একজন ঠিকাদারের পক্ষে গোটা দেশের সব কাজ করা কষ্টকর, যে কারনে তিনি ছোট ছোট ঠিকাদারের কাছে কাজগুলো দিয়ে দিচ্ছেন। এতে কাজের মান ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। কাজগুলো সেই অযোগ্যদের হাতেই চলে যাচ্ছে। 

ঝিনাইদহ সড়ক বিভাগে কাজ করেন এক ঠিকাদার নাম প্রকাশ না করে জানান, এ বছর ঝিনাইদহ জেলায় প্রায় ৬ কোটি টাকার ১২ গ্রুপের দরপত্র আহবান করা হয়েছে। কাজগুলো সবই পেয়েছেন নওগা’র ঠিকাদার আমিনুল হক। তিনি কাজগুলো ছোট ছোট ঠিকাদারের কাছে বিক্রি করেছেন। এখন কাজ করছেন ছোট ছোট ঠিকাদাররা, যাদের সংশ্লিষ্ট দপ্তর অযোগ্য মনে করছেন। তিনি আরো জানান, যারা কাজগুলো করছেন তাদের ঠিকাদারের নিকট থেকে মোটা টাকায় ক্রয় করতে হয়েছে। ফলে ১০ শতাংশ নিম্ন দরের পর আবার এই খরচ করে যারা কাজ করবেন তারা কোনো ভাবেই কাজের মান রাখতে পারবেন না। তাদের দাবি ক্ষুদ্র মেরামতের কাজগুলো এলটিএম পদ্ধতিতে দরপত্র আহবান করলে নতুন নতুন ঠিকাদার তৈরী হবে। প্রকাশে লটারীর মাধ্যমে ঠিকাদার নির্বাচন করা হলে শতকারা ১০ শতাংশ দরে ঠিকাদাররা কাজ পবেন। তাহলে কাজগুলোর মানও ধরে রাখা সম্ভব হবে। ঠিকাদররা বলেন, কার্যত ছোট ঠিকাদাররা কাজ করছেন, তবে তাদের অতিরিক্ত পয়সা গুনতে হচ্ছে। এতে তাদের কাজ করতে হচ্ছে নিম্নমানের, যার কারনে কাজের মান খারাপ হচ্ছে। 

এ বিষয়ে ঝিনাইদহ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্বে থাকা মুকুল জ্যোতি বসু জানান, এই পদ্ধতি সড়কের প্রধান কার্যালয়ের সিদ্ধান্তে বাস্তবায়িত হচ্ছে। তারা কেন্দ্রিয় নিয়ম মেনেই দরপত্র আহবান করে থাকেন। খুলনা জোন এর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোঃ জর্জিস হোসেন জানান, সড়ক বিভাগের বর্তমান নিয়মের কারনেই একজন ঠিকাদার দেশের সব অঞ্চলের কাজগুলো পেয়ে যাচ্ছেন। তবে এটা থেকে কিভাবে বের হওয়া যায় সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা তা নিয়ে ভাবছেন।

 


No comments

Powered by Blogger.