বাংলাদেশের একমাত্র বিশেষায়িত শিশু হাসপাতালটি এখন নিজেই রোগী

 

এম এ কবীর,ঝিনাইদহ থেকে -

  বাংলাদেশের একমাত্র ২৫ শয্যার বিশেষায়িত শিশু হাসপাতালটি এখন নিজেই রোগী। হাসপাতালে না আছে জনবল, না আছে   পরিক্ষা নিরিক্ষার যন্ত্রপাতি। নানা সংকটে হাসপাতালটি এখন জর্জরিত। 

  পরিপাটি সুরম্য ভবনটি কেবল শিশু হাসপাতালের নাম পরিচয় নিয়েই দাড়িয়ে আছে বিগত ১৬ বছর ধরে। এখানে বর্তমানে শিশু রোগী ভর্তির সুযোগ পেলেও বিভিন্ন পরিক্ষা  সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তারা। জনবল নিয়োগ না করায় সুরম্য স্টাফ কোয়াটারগুলো খালি পড়ে আছে। এদিকে অভিযোগ উঠেছে, ১৫ বছর আগে বরাদ্দ দেয়া   হাসপাতালের ৩ কোটি টাকা মুল্যের যন্ত্রপাতির কোন হদিস নেই। সেগুলো গায়েব হয়ে গেছে। অনেক যন্ত্রপাতি পড়ে থেকে নষ্ট হয়ে গেছে। জানা গেছে, বাংলাদেশের একমাত্র সরকারী এই শিশু হাসপাতালটি ঝিনাইদহে প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৫ সালে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া হাসপাতালটির উদ্বোধন করেন। প্রতিষ্ঠার ১৫ বছর পর গত ৯ জানুয়ারি শিশু হাসপাতালটি যন্ত্রপাতি, ডাক্তার ও জনবল সংকট নিয়ে চালু করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ের সিনিয়র সচিব আসাদুল ইসলাম (সাবেক স্বাস্থ্য সচিব) ও বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডাঃ রাশেদা সুলতানাসহ ঝিনাইদহের জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। অথচ উদ্বোধনের ৬ মাস পার হলেও নিয়োগ দেয়া হয়নি ডাক্তারসহ প্রয়োজনীয় জনবল। পরিক্ষা নিরিক্ষার যন্ত্রপাতি না থাকায় ল্যাবরেটরি ফাঁকা পড়ে আছে। জনবল নিয়োগ ও যন্ত্রপাতির চাহিদা দিয়ে সাত বার চিঠি দেয়া হয়েছে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব বরাবার।  সর্বশেষ ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন দপ্তর থেকে গত ১১ মার্চ ৫২৩ নং স্মারকে জনবল নিয়োগ ও একই তারিখে ৫২১ নং স্মারকে যন্ত্রপাতি চেয়ে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব বরাবর পত্র পাঠানো হয়। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আটকে আছে ঝিনাইদহ শিশু হাসপাতালের সাস্থ্যসেবা। ওই চিঠি সূত্রে জানা গেছে, সরকারী শিশু হাসপাতালটিতে একমাত্র নার্স ব্যতিত অধিকাংশ পদ শুন্য। চিকিৎসকের ৫টি পদের মধ্যে স্থায়ী নিয়োগ আছে মাত্র একজন চিকিৎসকের। অফিসিয়াল কাজের জন্য ৫ জন স্টাফের মধ্যে একজনও নেই। এছাড়া ওয়ার্ডবয়, আয়া, কুক, মশালচি, মালি, ঝাড়–দার ও সুইপার পদে নিয়োগ দেয়া হয়নি। দুই জন কনসালটেন্ট’র মধ্যে আছেন একজন। দাপ্তরিক বা অফিসিয়াল কাজ করার জন্য কোন জনবল নেই। নেই কম্পিউটার ও প্রিন্টার। অনেকটা ধারকরে সরকারী শিশু হাসপাতালের কাজ পরিচালিত হচ্ছে বলে স্টাফরা জানান। হাসানুজ্জামান নামে এক শিশু রোগীর অভিভাবক জানান, হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা মোটামুটি ভালো। ওয়ার্ডের পরিবেশ চমৎকার। এখান থেকে ফ্রি ওষুধও দেয়া হয়। কিন্তু খাওয়া ও পরিক্ষা নিরীক্ষার কোন সিস্টেম নেই। শিশু হাসপাতালটি শহর থেকে অনেক দুরে হওয়ায় বাইরে থেকে পরিক্ষা নিরীক্ষা করতে বেগ পেতে হয়। বিশেষায়িত শিশু হাসপাতালটির জুনিয়র কনসালটেন্ট ডাঃ আলী হাসান ফরিদ (জামিল) জানান, শিশু রোগীদের সবচে বেশি সমস্য হচ্ছে তাদের পরিক্ষা নিরিক্ষা। হাসপাতালে কোন যন্ত্রপাতি না থাকায় শিশুদের দুর দুরান্ত থেকে পরিক্ষা নিরীক্ষা করতে হচ্ছে। অথচ একটি করে ফটোথেরাপি, ইনকিউবেটর, নেবুলাইজার, এক্সরে ও সাকার মেশিন হলে আপাতত চিকিৎসা কার্যক্রম চালানো সম্ভব হতো। তিনি বলেন নিজেদের টাকায় একটি কম্পিউটার ও প্রিন্ট মেশিন কেনা হয়েছে। ৮ জন সেচ্ছাসেবির বেতন দিচ্ছেন ঝিনাইদহ পৌরসভার মেয়র সাইদুল করিম মিন্টু ও জাহেদী ফাউন্ডেশন। তিনি বলেন শিশু হাসপাতালে ১৫টি স্টিলের আলমিরা, ৭টি ফাইল কেবিনেট, ৩৪ টি লোহার র‌্যাক, ৭০টি চেয়ার ও ৩৬টি ফুল সেক্রেটারিয়েট টেবিল থাকলেও পড়ে থেকে সেগুলো বেশির ভাগ ব্যবহারের অযোগ্য। তবে ঘষে মেজে কাজ চালানো হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন ডাঃ সেলিনা বেগম জানান, করোনা মহামারির কারণে সব কিছু পিছিয়ে যাচ্ছে। ১০ দিনের কাজ এখন এক বছরেও হচ্ছে না। সবাই ব্যস্ত করোনা নিয়ে। তিনি বলেন, আমরা শিশু হাসপাতালটির পূর্ণাঙ্গতা ফিরিয়ে আনতে প্রতিনিয়ত চিঠির মাধ্যমে মন্ত্রনালয়ের সাথে যোগাযোগ রাখছি। আশা করা যায় জনবল ও যন্ত্রপাতির সংকট দূর হবে। ওই হাসপাতালের নার্স ও সেচ্ছাসেবীরা জানান, জুনিয়র কনসালটেন্ট হিসেবে ডাঃ আলী হাসান ফরিদ (জামিল) দায়িত্ব গ্রহনের পর সরকারী শিশু হাসপাতালটির ক্রমাগত শোভা বর্ধন করা হচ্ছে। পরিত্যাক্ত জমিতে ফুল বাগান ও ফলদ ও বনজ বৃক্ষ লাগানো হচ্ছে। এছাড়া হাসপাতাল চত্বর দৃষ্টিনন্দন করে গড়ে তোলা হচ্ছে। মূল ভবন ও স্টাফ কোয়াটার সব সময় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে লোক নিয়োগ করা হয়েছে। রোগী এবং ভূক্তভোগীরা জনবল নিয়োগ সহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে অবিলম্বে শিশু স্বাস্থ্য সুরক্ষার দাবী জানান।


No comments

Powered by Blogger.