নিজের পুরষ্কারের টাকা আর উপহার নিয়ে বাদির বাড়িতে তদন্ত কর্মকর্তা, হত্যা মামলার অভিযোগপত্র জমা দিয়েই ছুটে এসেছেন পরিবারটিকে সান্তনা জানাতে

 স্টাফ রিপোর্টার-

হত্যা মামলার অভিযোগপত্র জমা দিয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা সাগর সিকদার ছুটে গেলেন খুন হওয়া যুবক শাহিন আলমের বাড়ি। সঙ্গে পরিবারের সকলের জন্য নিয়ে যান জামা-কাপড়। নিহতের রেখে যাওয়া ১১ মাস বয়সের শিশু মরিয়মকে কোলে তুলে নিয়ে আদর করেন, আর হাতে দেন উপহার। এমনকি  দ্রুততম সময়ে হত্যাকারীদের সনাক্ত, গ্রেপ্তার ও অভিযোগপত্র দেওয়ায় পুলিশ সুপারের পক্ষ থেকে পাওয়া উপহারের ৫ হাজার টাকাও তিনি পরিবারটির হাতে তুলে দিয়েছেন।  

মঙ্গলবার দুপুরে তদন্তকারী কর্মকর্তা সাগর সিকদার নিহত শাহিন আলমের বাড়ি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামে যান এবং এই সকল উপহার তুলে দেন। এ সময় মামলার বাদি চাঁদ আলী কান্নাকন্ঠে জানান, তার ছেলে চলে গেছে। এরপর মামলার সুত্রে পরিচয় হয় পুলিশ কর্মকর্তা সাগর সিদকারের সঙ্গে। তার কর্মকান্ড ও আলাপ-ব্যাবহারে মুগ্ধ হয়ে নিজের ছেলের জায়গায় স্থান দিয়েছেন। তিনি আরো জানান, মামলা তদন্ত করতে গিয়ে কখনও কাউকে হয়রানী করেননি। কারো কাছে টাকা-পায়সা দাবি করেনি। আরো সাধ্যমতো তাদের সহযোগিতা করেছেন। ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত তা উদ্ধার করে এক সপ্তাহের মধ্যে সু-দূর ঠাকুরগা থেকে আসামী গ্রেপ্তার করে এনেছেন। এখন চার্জসীট দিয়ে তার বাড়িতে ছুটে এসেছেন।  

প্রসঙ্গত, গত ৬ জুন সকালে বালিয়াডাঙ্গা বাজারের পাশে একটি কলার ক্ষেতে ব্যবসায়ী শাহিন আলমের লাশ পড়ে থাকতে দেখেন এলাকাবাসি। পরে পুলিশকে খবর দিলে লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠান। শাহিন আলমের বালিয়াডাঙ্গা বাজারে লেদ-গ্রীলের ব্যবসা ছিল। নিহতের বাবা চাঁদ আলী জানিয়েছেন, ৫ জুন রাত ১১ টার দিকে তার ছেলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে বাড়ি ফিরছিল। পথে সন্ত্রাসীরা তাকে হত্যা করে একটি কলার ক্ষেতের মধ্যে ফেলে রেখে যায়। ছেলের মৃত্যুর পর তিনি পুত্রবধু তানিয়া খাতুন ও তাদের ১১ মাস বয়সের একমাত্র কন্যা মরিয়মকে নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন। তিনি এই হত্যাকারীদের ফাঁসি দাবি করেছেন। 

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থানার এসআই সাগর সিকদার জানান, হত্যাকান্ডটি ছিল সকলের অজানা। যাকে হত্যা করা হয়েছে তার কোনো শত্রু ছিল না। তাছাড়া হত্যাকারীরা মোটিভ ঘোরাতে নিহত শাহিন আলমকে (২৮) উলঙ্গ করে ফেলে রেখে যায়। এতে তারাও প্রথমে ধারনা করেছিল নারী ঘটিত কোনো ঘটনায় এই হত্যাকান্ড হতে পারে। তবে টাকার উপর রক্তের দাগ থেকেই মাত্র ৭ দিনের মধ্যে তিনি এই আলোচিত হত্যাকান্ডের মূল কারণ বের করে হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত দুই আসামীকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছেন। যার মধ্যে একজন একই এলাকার মমিন উল্লাহর ছেলে জসিম উদ্দিন বাবু (২৫) আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে ঘটনা স্বীকার দিয়েছেন। অন্য আসামী হচ্ছেন সিরাজুল ইসলামের ছেলে মিজানুর রহমান বাবুল (৩৫)। তারা টাকা ছিনতাই করতে এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন। তদন্তে অভিযোগ প্রাথমিক ভাবে প্রমানিত হওয়ায় ৩১ আগষ্ট ওই ২ জনকে অভিযুক্ত করে মামলার চার্জসীট জমা দিয়েছেন।  

তদন্তকারী কর্মকর্তা সাগর সিকদার জানান, একটি হত্যাকান্ডে একটি পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়েন। তাদের আশা থাকে পুলিশের পক্ষ থেকে সকল প্রকার সহযোগিতা পাবার। তিনি পরিবারটির সকল প্রকার সহযোগিতা করেছেন। পাশাপাশি নিজের দায়িত্বের জায়গা থেকে দ্রুত সময়ে হত্যার কারন উদ্ধার ও জড়িতদের গ্রেপ্তার করেছেন। সাধারণ মানুষ যেন হয়রানি না হন সে দিকটাও খেয়াল করেছেন। উপহার প্রসঙ্গে বলেন, পরিবারটির যে ক্ষতি হয়েছে তা পুরণ করা কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। তবে চার্জসীট জমা দিয়ে তাদেরকে সান্তনা দিতে বাড়িতে উপহার নিয়ে গিয়েছিলেন। এমনকি পুলিশ সুপারের নিকট থেকে পাওয়া পুরষ্কার তিনি পরিবারের হাতে তুলে দিতে পেরে খুশি বলে জানিয়েছেন। 

এ বিষয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আনোয়ার হোসেন জানান, রাতের অন্ধকারে ঘটে যাওয়া হত্যাকান্ড নিয়ে এলাকার অনেকে আতংকিত ছিলেন। কে কখন হয়রানীর স্বীকার হন সেই আতংক ছিল সবার মধ্যে। কিন্তু মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার সততা ও নিষ্টার কারনে কোনো নিরিহ মানুষ হয়রানীর স্বীকার হননি। দ্রুত আসামী গ্রেপ্তার হয়েছে, আবার দ্রত সময়ে চার্জসীটও দিয়েছেন। এতে এলাকার সাধারণ মানুষ অত্যান্ত খুশি। এখন তারা আসামীদের উপযুক্ত শাস্তির প্রত্যাশা করছেন।

প্রসঙ্গত, কালীগঞ্জ থানার এই কর্মকর্তা ইতিপূর্বে রাস্তার পাশে বিদ্যুতায়িত হয়ে পড়ে থাকা এক হুনুমান বাঁচিয়ে এলাকায় সাড়া ফেলেছিলেন। চলতি বছরের ২৪ জুন কালীগঞ্জ শহরের গান্না সড়কে পড়ে থাকা ওই হুনুমানকে উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বন বিভাগের হাতে তুলে দেন।     


No comments

Powered by Blogger.