ভিআইপি এলাকায় নাক চেপে চলাচল, দূগন্ধযুক্ত পানি যাচ্ছে সড়কে
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি-
চাকলাপাড়ার এলাকার মাহাবুব উদ্দিন আহমদ (বীর বিক্রম) সড়ক, যার দুই পাশে রয়েছে সরকারি বড় কর্মকর্তাদের বাসভবন। স্থানীয় সাংসদ, জেলা জজ, জেলা যুগ্ম জজ, পুলিশ সুপার, গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলীর বাস করেন এই সড়কেই। একাধিক সহকারী জজ, সিনিয়র সহকারী জজও ভাড়া থাকেন এই এলাকায়। বেশ কয়েকজন বড় ব্যবসায়ীর বাসাও রয়েছে সড়কটিতে। পাশের সড়কে রয়েছে ঝিনাইদহ সার্কিট হাউজ।
অথচ এই সড়কটি দিয়ে অধিকাংশ সময় চলাচলকারীদের নাক-মূখ চেপে চলাচল করতে হয়। জনৈক রবিউল ইসলামের পাঁচতলা বাসার ময়লা পানি নিষ্কাষনের ব্যবস্থা না থাকায় মাঝে মধ্যেই হাউজ উপচে সড়কে প্রবেশ করছে। এই পানি সড়কে জমে দূর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। নোংরা পানি মাড়িয়ে পথচারী থেকে শুরু করে সবাইকে কষ্ট করে চলাচল করতে হচ্ছে। এই অবস্থা দীর্ঘদিনের হলেও প্রতিকারের কোনো ব্যবস্থা নেই বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা গেছে, শহরের চাকলাপাড়ার মুক্তিযোদ্ধা মাহাবুব উদ্দীন আহম্মদ (বীর বিক্রম) সড়টি তারেক মোড় থেকে বের হয়ে একটি নবগঙ্গা নদীতে মিশেছে। আরেকটি শাখা পাড়ার মধ্যে দিয়ে বেরিয়ে চাকলাপাড়া হাটখোলা এলাকায় এসেছে। অন্য আরেকটি শাখা বিহারী পট্টি এলাকায় গিয়ে শেষ হয়েছে। এই সড়কগুলোর দুই পাশে অসংখ্য বহুতল ভবন রয়েছে। রয়েছে ঝিনাইদহ-২ আসনের সাংসদ তাহজীব আলম সিদ্দিকীর বাসভবন। আরো রয়েছে জেলা জজ, জেলা যুগ্ম জজ ও পুলিশ সুপারের সরকারি বাসভবন। গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলীর সরকারি বাসাটিও এই সড়কেই।
এই সড়কের পশ্চিম পাশে রয়েছে জেলা জজ ও পুলিশ সুপারের বাসভবন। তার সামনেই পূর্ব পাশে রয়েছে একটি পাঁচতলা ভবন। যার মালিক শৈলকুপা উপজেলার পাচপাকিয়া গ্রামের রবিউল ইসলাম, যিনি পেশায় ব্যবসায়ী। গত ১১ থেকে ১২ বছর পূর্বে তিনি এই বাড়িটি নির্মান করেছেন। বাড়ির সামনে দুইটি উন্মক্ত হাউজ রয়েছে। বাড়ির পানি নিষ্কাষনের সঠিক কোনো ব্যবস্থা নেই। যে কারনে সামনের ওই ছোট ট্যাংক থেকে পানি উপচে সড়কে পড়ছে। রবিবার দুপুরেও সড়কের উপর পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। পাশাপাশি ওই সড়ক দিয়ে যারা চলাচল করছেন তারা রবিউল ইসলামের বাসার সামনে এসেই হাত দিয়ে নাক চেপে ধরছেন।
কথা হয় পথচারী আমিরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, গোটা বর্ষা মৌসুম তাদের এই সড়ক দিয়ে কষ্ট করে চলাচল করতে হয়। ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানির মধ্যে দিয়ে পাঁয়ে হাটাও যায় না। তারপরও উপায়ন্তর না পেয়ে চলাচল করতে হয়। তিনি আরো বলেন, পাঁচতলা বাড়িটি করার সময় মালিকের উচিত ছিল পানি নিষ্কাষনের বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া। একই এলাকার বাসিন্দা জাহিদুল হক জানান, তাদের এলাকায় পৌরসভার কোনো ড্রেন নেই। যে কারনে সবাই নিজেদের মতো করে পানি নিষ্কাষন করে থাকেন। তিনিও বাড়ির পেছনের অংশে বড় কুয়া তৈরী করেছেন। কিন্তু রবিউল ইসলাম সেটা না করে বাড়ির সামনে ছোট ছোট হাউজ তৈরী করে সেখানে পানি জমাচ্ছেন। প্রতিদিনই এই হাউজ ভেষে রাস্তায় দূর্গন্ধময় পানি প্রবেশ করছে। আরেক পথচারী রিপন কুমার বসু জানান, ময়লা পানি মাড়িয়ে তাদের চলতে হয়। এই স্থানে এলেই নাক-মূখ চেপে ধরা ছাড়া উপায় থাকে না। জেলা জজ আদালতের নাজির শেখ মোঃ আব্দুল হালিম জানান, সড়কটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সড়কেই জেলা ও দায়রা জজ সহ বেশ কয়েকটি সরকারি কর্মকর্তার বাসভবন। যারা বাসা-বাড়ির ময়লা পানির মধ্য দিয়ে চলাচল করছেন।
এ বিষয়ে ভবনের মালিক রবিউল ইসলাম জানান, মোট ১৬ টি ফ্লাট রয়েছে তার ভবনে। সব ফ্লাটে ভাড়াটিয়া থাকে না। বর্তমানে ১০ জন ভাড়াটিয়া রয়েছে। তিনি জানান, এলাকাটি ভিআইপি এলাকা। যে কারনে তিনি ভবন নির্মানের সময় পায়খানার সেপটি ট্যাংক ভবনের নিচে দিয়েছেন। ভবনের সামনে সড়কের পাশের থাকা দুইটি বড় হাউজে বাসার মানুষের গোসলের আর রান্নাঘরের পানি জমে থাকে। এই এলাকায় কোনো ড্রেনের ব্যবস্থা না থাকায় তিনি গোসলের আর রান্নার পানি হাউজে দিয়ে থাকেন। কিন্তু বাসায় লোকসংখ্যা বেশি হওয়ায় দ্রুত সে হাউজটি ভরে যায়। যা তিনি পয়সা খরচ করে পৌরসভার গাড়িতে অন্যত্র সরিয়ে ফেলেন। এ ক্ষেত্রে মাঝে মধ্যে গাড়ি পেতে সমস্যা হলে হাউজ ভেষে পানি রাস্তায় চলে যায়। তিনি দাবি করেন, হাউজ ভরে দ্রুত যেন পানি সড়কে না চলে যায় সে জন্য হাউজের উপর উন্মুক্ত হাউজ করেছেন। নিচে পানি ভরে উন্মক্ত হাউজে দেখা দেওয়া মাত্র তিনি গাড়ির ব্যবস্থা করেন থাকেন বলে জানান। হাউজ ছোট করে করার বিষয়ে তিনি দাবি করেন এটা ঠিক নয়। তার বাসা বড় হওয়ায় দ্রুত ভরে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে ঝিনাইদহ পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগের প্রধান কামাল উদ্দিন জানান, ওই এলাকাতে পৌরসভার কোনো ড্রেন নেই। তবে তারা ড্রেন করার উদ্যোগ নিচ্ছেন। দ্রুতই ড্রেন হবে বলে তিনি আশা করছেন।
No comments