সিত্রাংয়ের আঘাতে সাত জেলায় ১১ জনের মৃত্যু
মঙ্গলবার রাতেই ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হেনেছে। সিত্রাংয়ের আঘাতে দেশের ৭ জেলায় ১১ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে কুমিল্লায় একই পরিবারের তিন জন,
ভোলায় দুজন,
সিরাজগঞ্জে দুজন,
নড়াইল, বরগুনা,
শরীয়তপুর ও রাজধানী ঢাকায় একজন করে রয়েছেন।
কুমিল্লা
কুমিল্লায় ঝড়ো বাতাসে ঘরের ওপর গাছ পড়ে এক পরিবারের তিন জনের মৃত্যু হয়েছে।
সোমবার (২৪ অক্টোবর) রাতে জেলার নাঙ্গলকোট উপজেলার হেসাখাল ইউনিয়নের হেসাখাল পশ্চিম পাড়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। মৃতরা হলেন হেসাখাল পশ্চিম পাড়া গ্রামের নিজাম উদ্দিন, তার স্ত্রী সাথি আক্তার ও মেয়ে লিজা আক্তার।
নাঙ্গলকোট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রায়হান মেহবুব বলেন, রাত সাড়ে ১১টার দিকে খবর পেয়েছি, গাছ পড়ে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাস্থলে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ আছে। উদ্ধার কার্যক্রম চলছে।
হেসাখাল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. ইকবাল বাহার বলেন, রাতে ঝড়ো বাতাসে তাদের ঘরে গাছ পড়ে। এতে ওই পরিবারের তিন সদস্যের মৃত্যু হয়েছে।
নাঙ্গলকোট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফারুক হোসেন বলেন, তিন জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ঘরের ওপর পড়া গাছটি সরানোর চেষ্টা করছি আমরা। সেখানে আরও কেউ চাপা পড়েছে কিনা তা দেখছি।
নড়াইল
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে নড়াইলের লোহাগড়ায় ভারী বর্ষণ ও ঝোড়ো বাতাসে গাছের ডাল ভেঙে পড়ে মর্জিনা বেগম (৪০) নামে এক গৃহকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (২৪ অক্টোবর) দুপুরে উপজেলা পরিষদ চত্বরের পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের অদূরে এ ঘটনা ঘটে। মর্জিনা বেগম বাগেরহাট সদর উপজেলার অর্জুন বাহার গ্রামের মৃত এয়াকুব আলী শেখের মেয়ে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মর্জিনা বেগম লোহাগড়া পৌরসভার রাজোপুর গ্রামের গফফার শেখের বাড়ির ভাড়াটিয়া ছিলেন। তার মাদ্রাসাপড়ুয়া ছেলে জিহাদকে
(৮) নিয়ে ভাড়া বাড়িতে থেকে অন্যের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করতেন। বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে ভাড়া বাসা থেকে কাজের উদ্দেশে তিনি বের হন।
লোহাগড়া উপজেলা পরিষদ চত্বরের পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের অদূরে পৌঁছালে ঝোড়ো বাতাসে মেহগনি গাছের ডাল ভেঙে তার মাথায় পড়ে। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
লোহাগড়া থানার ওসি মো. নাসির উদ্দিন বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে লাশ পান। এরপর স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।
লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আজগর আলী বলেন, বিষয়টি তাৎক্ষণিক জেলা প্রশাসককে জানানো হয়। নিহতের একমাত্র সন্তান স্থানীয় মাদ্রাসা ও এতিমখানার শিক্ষার্থী। দ্রুত জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে সরকারিভাবে আর্থিক অনুদানসহ সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।
ভোলা
ভোলায় ঝোড়ো বাতাসে গাছ চাপা পড়ে দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (২৪ অক্টোবর) সন্ধ্যায় চরফ্যাশন ও দৌলতখান উপজেলায় এ ঘটনা ঘটে। মৃতরা হলেন- দৌলতখান পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের গোলাম মোস্তফার স্ত্রী বিবি খাদিজা (৮০) ও চরফ্যাশন উপজেলার শশীভূষণ ইউনিয়নের মনির হোসেন (৩০)।
দৌলতখান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম খান বলেন, সন্ধ্যায় নিজ ঘরে অবস্থান করেছিলেন বিবি খাদিজা। ঝড়ো বাতাসে হঠাৎ একটা বড় গাছ এসে ঘরের চালে পড়ে। এতে চাপা পড়ে খাদিজা আহত হন। স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল নোমান বলেন, মোটরসাইকেলে বাড়ি ফিরছিলেন মনির। এ সময় বাতাসে একটি গাছের ডাল ভেঙে গায়ে পড়লে আহত হন। তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে তার মৃত্যু হয়।
বরগুনা
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে ঝোড়ো হাওয়ায় বরগুনায় ঘরের ওপর গাছ পড়ে এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। সোমবার রাত ৮টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। নিহত নারীর নাম আমেনা খাতুন। তার বয়স ১১৫ বছর। তিনি বরগুনা সদর উপজেলার সোনাখালি গ্রামের বাসিন্দা। তার পরিবারকে আর্থিক সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
শরীয়তপুর
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে ঝোড়ো হাওয়ায় বসতঘরের ওপর গাছ পড়ে শরীয়তপুরের জাজিরায় সাফিয়া খাতুন (৬৫) নামে এক নারী মারা গেছেন। সোমবার সন্ধ্যার দিকে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কামরুল হাসান সোহেল।
সিরাজগঞ্জ
সিরাজগঞ্জের সদর উপজেলায় যমুনা নদীর ক্যানেলে নৌকাডুবে মা ও ছেলের মৃত্যু হয়েছে। লগি-বৈঠাচালিত ছোট নৌকায় সদর উপজেলার শিল্পপার্ক থেকে পুর্বমোহনপুর বাড়ি যাওয়ার পথে সোমবার
(২৪ অক্টোবর) রাত নয়টার দিকে সিত্রাংয়ের প্রভাবে সৃষ্ট ঝড়-বৃষ্টির কবলে পড়ে এ নৌকাটি ডুবে যায়।
নিহত মা-ছেলেরা হলেন-পুর্বমোহনপুর গ্রামের খোকনের স্ত্রী আয়েশা খাতুন
(২৮) ও তার ছেলে আরাফাত হোসেন (২)।
বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোসাদ্দেক হোসেন জানান, রাত সাড়ে আটটার দিকে শিল্পপার্ক এলাকা থেকে একটি ছোট্ট নৌকায় আয়েশা খাতুন ও তার দুই বছরের ছেলেসহ ৬ জন পুর্বমোহনপুর বাড়িতে ফিরছিলেন। মাঝপথে বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া শুরু হলে নৌকাটি ডুবে যায়। এ সময় আরাফাত মায়ের কোল থেকে নদীতে পড়ে মারা যায়। আর আয়েশা খাতুনকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তবে বাকিরা সাঁতার কেটে তীরে উঠতে সক্ষম হন বলে জানান ওসি।
এছাড়া রাজধানী ঢাকায় ঝড়ের কবলে পড়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
No comments