ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে অগ্রণী ব্যাংকের আঃ সালাম চাকরিচ্যুত, ম্যানেজারের অবসরকালীন সুযোগ-সুবিধা বন্ধ
ঋণ জালিয়াতির দায়ে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ অগ্রণী ব্যাংকের সাময়িক বরখাস্তকৃত ক্যাশ অফিসার আব্দুস সালামকে চুড়ান্তভাবে চাকরীচ্যুত করা হয়েছে। এছাড়াও ব্যাংকটির কালীগঞ্জ শাখার তৎকালীন ম্যানেজার শৈলেন কুমার বিশ্বাসকে সাময়িক বরখাস্ত বহাল ও অবসরকালীন সুযোগ সুবিধা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রোববার এ সংক্রান্ত একটি আদেশ অগ্রনী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে কালীগঞ্জ শাখায় পৌঁছায়।
“চাকরী হতে বরখাস্ত” গুরুদন্ড আরোপ শিরোনামে অগ্রণী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়র উপ-মহাব্যবস্থাপক সুস্মিতা মন্ডল সাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে জারীকৃত অভিযোগপত্র, অভিযোগ পত্রের জবাব, শুনানীর বক্তব্য, প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন ও তদন্ত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনসহ সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে কমিটি নিম্নক্তো সুপারিশ করেন। যা অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও গত ২৫ জানুয়ারি অনুমোদন করেন। ফলে অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড কর্মচারী চাকরী প্রবিধানমালা ২০০৮ এর অনুচ্ছেদ ৪৩(১)(খ)(৪) মোতাবেক আপনাকে চাকরী হতে বরখাস্তকরণ গুরুদন্ড আরোপ করা হয়।
২০২০ সালের ২৮ অক্টোবর কালীগঞ্জ অগ্রণী ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতি নিয়ে “কালীগঞ্জে কৃষিঋণের ২ কোটি টাকা আত্মসাৎ” শিরোনামে বিভিন্ন
পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে সাময়িকভাবে তৎকালীন ম্যানেজার শৈলেন কুমার বিশ্বাস ও ক্যাশ অফিসার আব্দুস সালামকে বরখাস্ত ও অস্থায়ী মাঠ সহকারী আজির আলীকে চাকরিচ্যুত করা হয়। এরপর ব্যাংকের উচ্চ পর্যায়ে থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কালীগঞ্জের কায়েকজন গ্রাহক দুর্নীতিবাজ ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ঝিনাইদহের আদালতে চারটি মামলা করেন।
এদিকে একই বছরের (২০২০) ডিসেম্বরে এ নিয়ে দৈনিক যুগান্তরের কালীগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি ও সবুজদেশ নিউজ ডটকমের বার্তা প্রধান শাহরিয়ার আলম সোহাগ, স্থানীয় দৈনিক নবচিত্রের বার্তা সম্পাদক আসিফ কাজল ও ব্যাংকের সদ্য যোগদানকৃত ব্যবস্থাপক এসপিও নাজমুস সাদাতের বিরুদ্ধে আব্দুস সালাম ও আজির আলী বাদী হয়ে ঝিনাইদহের একটি আদালতে পৃথক দুটি মানহানির মামলা করেন।
আব্দুস সালামের বিরুদ্ধে প্রমাণিত অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, অনিয়ম ও ভুয়া কৃষি ঋণ মঞ্জুরী ও বিতরণের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। মৃত ব্যক্তিদের নামে ভুয়া কৃষি ঋণ দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ। বিদেশে অবস্থানরত অবস্থায় প্রবাসি ব্যক্তিদের নামে ভুয়া কৃষি সৃষ্টির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ। ভুয়া এনআইডি ব্যবহার করে কৃষি ঋণ বিতরণ। ভুয়া ও জাল মাঠ পর্চা, খতিয়ান তৈরী করে চাষযোগ্য জমি দেখিয়ে ভুমিহীনদের কৃষি ঋণ প্রদান। কমান্ডিং এরিয়ার বাইরে কৃষি ঋণ বিতরণ। পল্লী ঋন বিতরণে সরাসরি জিএল কোড ব্যবহার। সল্প মেয়াদী এসএমই ঋন বিতরণে অনিয়ম। দীর্ঘদিন গ্রামে বা এলাকায় বসবাস না করা ব্যকিক্তদের নামে ভুয়া কৃষি ঋণ দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ। স্বাক্ষর/টিপসহি জাল করে জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া কৃষি ঋণ সৃষ্টি করে অর্থ আত্মসাৎ। মঞ্জুরীকৃত ঋনের চেয়ে গ্রাহককে কম টাকা প্রদান করে অবশিষ্ট অর্থ আত্মসাৎ। আবাদী জমির প্রমানক গ্রহন না করে ঋণ বিতরণ ও শাখার কর্মকর্তা কর্মচারিদের সাথে দুর্ব্যবহার, নিরিক্ষা কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন।
তথ্য নিয়ে জানা গেছে, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোঠায় ২০১৭ সালের ৫ অক্টোবর কালীগঞ্জ শাখায় অফিসার ক্যাশ পদে যোগ দেন হরিণাকুন্ডু উপজেলার ভেড়াখালী গ্রামের আব্দুল গণির ছেলে আবদুস সালাম। তিনি প্রথম বিদ্যুৎ বিল ও ২০১৯ সালের ১ ফেব্রুয়ারী ঋণ শাখায় যোগদান করেই দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন।
এ ব্যাপারে অগ্রণী ব্যাংক কালীগঞ্জ শাখার বর্তমান শাখা ব্যবস্থাপক আরিফ উদ্দিন বলেন, ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে একটি আদেশের কপি তিনি হাতে পেয়েছেন। সেখানে সাময়িক বরখাস্ত ক্যাশ অফিসার আব্দুস সালামকে গুরুদন্ড আরোপ করা হয়েছে। তাকে স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, শাখাটির তৎকালীন ম্যানেজার শৈলেন কুমার বিশ্বাস অবসরে গেছেন। কিন্তু সাময়িক বরখাস্তের আদেশ বহাল রাখার নির্দেশ ও যেসকল ঋণে ত্রুটি আছে সেগুলো নিরুপণ না করা পর্যন্ত অবসরকালীন সকল সুযোগ সুবিধা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
No comments