কালীগঞ্জে কৃষক হাসছে ফুলে

শাহজাহান আলী সাজু-  ফুলের কদর সর্বত্র। ফুল ভালোবাসে না এমন কেউ নেই। আর বছর জুড়ে উৎসব আর আয়োজনে তো ফুল ছাড়া জমেই না। তাই চাহিদাও ব্যাপক। প্রতিবছর বসন্ত উৎসব, ভালোবাসা দিবস, বাংলা ও ইংরেজি নববর্ষ, স্বাধীনতা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মতো দিনগুলোতে ফুলের অতিরিক্ত চাহিদা থাকে। এই চাহিদার সিংহভাগ যোগান দিয়ে থাকেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ফুলচাষিরা। ফলে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে কালীগঞ্জে ফুল চাষ। বিশেষ করে কালীগঞ্জ উপজেলার ১২টি গ্রামে প্রায় আড়াই শত একর জমিতে এখন চাষ হচ্ছে, জারবেরা, চন্দ্রমল্লিকা, গাঁদা, রজনীগন্ধ্যা, বিভিন্ন রঙের গোলাপসহ নানা জাতের ফুল। এর মধ্যে শুধু জারবেরা ফুলের চাষ হচ্ছে প্রায় ১৪ একর জমিতে। এলাকার উৎপাদিত ফুল প্রতিদিন চলে যাচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বড় বড় শহরগুলোয়। 

কৃষিবিদ ও কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, জারবেরা ফুল চাষের জন্য এ অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া বেশ উপযোগী। বছরের যে কোন সময় চাষ করা যায়। শীত মৌসুমে উৎপাদন বেশি হয়। এছাড়া দেশের বাজারে এই ফুলে দাম ও চাহিদা বেশি। তবে এই ফুল লাভজনক হলেও খরচ বেশি হওয়ায় চাষ করতে পারছে না সাধারন কৃষকরা।

কথা হয় কালীগঞ্জ উপজেলার সবথেকে বড় ফুল চাষি ত্রিলোচনপুরের টিপু সুলতানের সাথে, তিনি জানান, ২০১৬ সালের জুন মাসে পাশ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে জারবেরা ফুলের চারা সংগ্রহ করে প্রথম ৯৬ শতক জমিতে রোপন করি। এরপর তিন মাস পর গাছে ফুল আসতে শুরু করে। বীজ রোপন, ক্ষেতের চারপাশে বাশেঁর বেড়া স্থাপন, উপরের ছাউনি, সার ওষুধ ও শ্রমিক খরচসহ এ পর্যন্ত ৩৩ লাখ টাকা খরচ হয়। এই ফুল পরিচর্যা করার জন্য শ্রমিকরা নিয়মিত কাজ করে। বর্তমানে তিনি বিভিন্ন রঙের জারবেরা, বিভিন্ন রঙের গোলাপ ও চন্দ্রমল্লিকাসহ সাড়ে ৭ বিঘা জমিতে ফুল চাষ করছেন। তিনি এবছরে আরো সাড়ে ৫ বিঘা জমিতে নতুন করে ফুল চাষ করবেন বলে জানান। 

উপজেলা বানুড়িয়া গ্রামের ফুল চাষি ইকরামুল ইসলামের সাথে, তিনি জানান, আমার ১০ কাঠা জমিতে গোলাপ ফুলের চাষ করি। এতে আমার গত ১ বছরে দেড় লক্ষ টাকা খরচা হয়েছে। তিনি এপর্যন্ত লাভের মুখ না দেখলেও এখন থেকে বছরের ৩/৪ লক্ষ টাকার ফুল বিক্রয় করতে পারবেন। কারন গোলাপ লাগানোর ৪ বছর পর্যন্ত ফুল তোলা যায়। প্রথম বছরে খরচা বেশী হলেও পরবর্তীতে খরচা কম। ধান বা অন্যান্য চাষের চেয়ে ফুল চাষ বেশী লাভজনক  বলে মনে করেন।

বালিয়া ডাঙ্গা গ্রামের মহিদুল ইসলাম জানান, ১০ কাঠা জমিতে রজনীগন্ধ্যা ফুলের চাষ করেছি। রজনীগন্ধ্যা ফুলে ৩ বছর পর্যন্ত ফুল তোলা যায়। এতে প্রথম বছরে খরচা বাদে ১০ হাজার টাকা হলেও পরবর্তী ২ বছর ৬০ থেকে ৮০ হাজার টাকার ফুল বিক্রয় করতে পারবেন। এছাড়া আরো সাড়ে তিন বিঘা জমিতে জারবেরা ও গাঁদা ফুলের চাষ করেছেন তিনি। 

কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার মাহবুব আলম রনি জানান, কালীগঞ্জ উপজেলায় বিভিন্ন গ্রামে গ্রায় ২৫ একর জমিতে ফুল চাষ হচ্ছে। এই উপজেলাতে চাষ করা হচ্ছে জারবেরা, রজনীগন্ধা, গোলাপ, গাঁদাসহ নানা জাতের ফুল। লাভ বেশি হওয়ায় কৃষকরা দিন দিন ফুল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। 


No comments

Powered by Blogger.