হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু, আজকের বাংলাদেশ, আমাদের শিক্ষা ও করণীয়

হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু :

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাঙালির অবিসংবাদিত মহান নেতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলার আপামর জনতার অংশগ্রহণে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। বঙ্গবন্ধু যেন স্বপ্ন শব্দটির সমার্থক! সেই মহান নেতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা মানে বাংলাদেশের স্বপ্নকেই হত্যা করা।

বাল্যকাল থেকেই দেশের প্রতি অধিক প্রেম জন্ম নিয়েছে আমার নানা মরহুম মুক্তিযোদ্ধা মুহসীন প্রধান-এর নিকট থেকে বঙ্গবন্ধুকে জেনে। বঙ্গবন্ধুকে দেখিনি কিন্তু তাঁকে পড়েছি, হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করেছি। বঙ্গবন্ধুকে হারিয়েছি কিন্তু তাঁর আদর্শ নিজের মধ্যে ধারন করতে চেষ্টা করেছি। পারিপার্শ্বিক অবস্থানে যেখানে ঝাঁক বেধে সবাই নিরুদ্দম ও অন্যায়ের মিছিলে জমজমাট, সেখানে বঙ্গবন্ধুর জীবনী পড়লে একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ার প্রত্যয়ে দৃপ্ত হয় হৃদয়। বঙ্গবন্ধুর লেখনী, গবেষকদের বিভিন্ন বই ছোট্ট বয়স থেকে আমার হৃদয়ে একজন বন্ধু, অভিভাবক, ন্যায়বিচারের কারিগর ও দেশপ্রেমের শিক্ষা হিসেবে বয়ে চলেছে।

১৯৭১ সালে দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর আজকের এই দিনে প্রথম বিজয় অর্জন করেছিল বাঙালি জাতি ও আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি সোনার বাংলা। দেশ ও জাতির সামগ্রিক উন্নয়নের পথে বাধাসমূহ চিহ্নিত করে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারলে বাঙালি জাতি তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে এক ধাপ এগিয়ে যাবে। 

বঙ্গবন্ধুর অস্তিত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে কবি অন্নদাশঙ্কর রায় “বঙ্গবন্ধু” নামক কবিতায় লিখেছেন-

“যতদিন রবে পদ্মা মেঘনা

গৌরী যমুনা বহমান,

ততদিন রবে কীর্তি তোমার

শেখ মুজিবুর রহমান।

দিকে দিকে আজ অশ্রু গঙ্গা

রক্ত গঙ্গা বহমান

নাই নাই ভয় হবে হবে জয়

জয় শেখ মুজিবুর রহমান।”


স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন করলেও পাক-সরকার ক্ষমতা হস্তান্তরে তালবাহানা শুরু করলে বাঙালি জাতি বীরদর্পে স্বাধীনতার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। ১৯০ বছরের ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটিয়ে ১৯৪৭ সালে মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে ভারতবর্ষ বিভক্ত হলেও দুইটি আলাদা প্রদেশ নিয়ে পাকিস্তান গঠন করা যৌক্তিক ছিল না। যার ফলশ্রুতিতেই পাকিস্তান সরকারের অধীনে দীর্ঘ ২৪ বছর শাসন আর শোষণের দুর্দশার মধ্যে কেটেছে বাঙালি জাতির।  

অবশেষে জাতিকে মুক্ত করতে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। বাঙালির মুক্তির সনদ খ্যাত এই ভাষণের পরই বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ হতে শুরু করে। আর ২৬ শে মার্চের প্রথম প্রহরে পাক হানাদার বাহিনীর গণহত্যার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হয়। সেই থেকে ২৬৬ দিনের দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বীর বাঙালির ঐক্য আর সাহসিকতায় ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন সার্বভৌম এই পূন্যভূমির শুভ সূচনা হয়। 

বীর বাঙালির সেই মুক্তিকামী মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারবর্গের শাহাদাত বার্ষিকী ১৫ আগস্ট। প্রতিবছর তাই এই দিনটিকে জাতীয় শোক দিবস হিসাবে অবিহিত করা হয় এবং শোকের মাস হিসাবে এই মাসটিকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হয়। শোকের এই মাসেই বঙ্গবন্ধু প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আমাদের ‘অন্বেষী’ টিমের সদস্যবৃন্দকে নিয়ে ৩ আগস্ট, ২০১৯ ইং বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় গমন করি। যা এখন শুধু বঙ্গবন্ধুর সমাধি পরিদর্শন নয় বরং দেশি-বিদেশী পর্যটকদের নিকট একটি ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। 

বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে প্রবেশ করতেই দেখা মিলবে সবুজ শ্যামল ঘাসাবৃত ছোট্ট প্রাঙ্গন পেরিয়ে দীর্ঘ প্রবেশ পথের দক্ষিণে মসজিদ। উত্তরে নিচতলায় চমৎকার একটি লাইব্রেরী এবং চারপাশে ও উপরের গ্যালারীতে স্মৃতি সংগ্রহশালা বা জাদুঘর। মূল ফটক থেকে ভেতরে প্রবেশ করার পথে দক্ষিণ পার্শ্বে চারিদিকে বৃক্ষাবৃত শান বাধানো পুকুর রয়েছে। ভেতরে সমাধি কমপ্লেক্স এর পাশে একটি ঝর্ণা, পুরাতন বসতভিটা ও পিতৃভূমির নকশাযুক্ত ভবন এবং বঙ্গবন্ধুর পছন্দের আমগাছসহ বাগান আর আত্মীয় স্বজনের করব। মূল সমাধির ভেতরে পিতামাতার পাশে শায়িত আছেন বাঙালির মহান নেতা। 

১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট ধানমন্ডির বাসভবনে স্বপরিবারে নির্মমভাবে নিগত হওয়ার পর বিশ্বের খ্যাতিমান ব্যক্তিবর্গ বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে যেসব মন্তব্য করেন তার মধ্যে অন্যতম কিছু মন্তব্য লিপিবদ্ধ করছি... 

১. মুজিব হত্যার পর বাঙালিদের আর বিশ্বাস করা যায় না, যারা মুজিবকে হত্যা করেছে তারা যেকোন জঘন্য কাজ করতে পারে। - (নোবেল বিজয়ী উইলিবান্ট)

২. শেখ মুজিবের মৃত্যুতে বিশ্বের শোষিত মানুষ হারালো তাদের একজন মহান নেতাকে, আমি হারালাম একজন অকৃত্রিম বিশাল হৃদয়ের বন্ধুকে। - (ফিদেল কাস্ট্রো)

৩. আপোষহীন সংগ্রামী নেতৃত্ব আর কুসুম কোমল হৃদয় ছিল মুজিব চরিত্রের বৈশিষ্ঠ্য। - (ইয়াসির আরাফাত)

৪. শেখ মুজিব নিহত হবার খবরে আমি মর্মাহত। তিনি একজন মহান নেতা ছিলেন। তার অনন্য সাধারন সাহসিকতা এশিয়া ও আফ্রিকার জনগনের জন্য প্রেরণাদায়ক ছিল। - (ইন্দিরা গান্ধী)

৫. আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের মত তেজী এবং গতিশীল নেতা আগামী বিশ বছরের মধ্যে এশিয়া মহাদেশে আর পাওয়া যাবে না। - (হেনরি কিসিঞ্জার)

৬. শেখ মুজিব নিহত হলেন তার নিজেরই সেনাবাহিনীর হাতে অথচ তাকে হত্যা করতে পাকিস্তানীরা সংকোচবোধ করেছে। (বিবিসি-১৫ আগস্ট ১৯৭৫)

বঙ্গবন্ধু আজ নেই, আছে তাঁর স্মৃতিবিজড়িত পিতৃভূমি, আছে স্বাধীন সোনার বাংলা আর বাঙালির হৃদয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ। যিনি ছিলেন কৈশরে দূরন্ত, যৌবনে বিপ্লবী, আর পৌঢ়ে বাঙালির মুক্তিকামী মহান নেতা। 

আজকের বাংলাদেশ : 

দেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে উন্নীত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশনেত্রী শেখ হাসিনার দুর্বার নের্তৃত্বে দেশ আজ উন্নয়নশীল থেকে উন্নতির সোপানে ধাবিত হচ্ছে। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে দেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে, ২০৩০ সালে টেকসই উন্নয়নের দেশে আর ১৯৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করার প্রয়াসও অব্যাহত রয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় আজ অকল্পনীয় অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। ইতোমধ্যে নিজস্ব অর্থায়নে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপন হল, দৃশ্যমান হয়ে মহাসড়কে আমূল পরিবর্তন এনে দিয়েছে পদ্মা সেতুর মত দীর্ঘতম সেতু। চালু হলো মেট্টোরেল, মংলা বন্দর, পায়রা বন্দর ও তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। চালু হওয়ার অপেক্ষায় বঙ্গবন্ধু টানেল, নির্মাণ কার্য চলছে রূপপুর পারমাবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ অসংখ্য উল্লেখযোগ্য স্থাপনার।  

তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে সর্বক্ষেত্রেই আমূল পরিবর্তন এসেছে। উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে শিক্ষা-সংস্কৃতি, চিকিৎসা, খেলাধুলায় উন্নতির ছোঁয়া লক্ষ্যণীয়। স্বাধীনতা পরবর্তী মাথাপিছু আয় ১১০ মার্কিন ডলার থেকে বৃদ্ধি আজ তা ২৪০০ মার্কিন ডলার পেরিয়েছে। উচ্চশিক্ষার দ্বার খুলেছে ব্যাপকভাবে, মাত্র ছয়টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বর্তমানে প্রায় ৫৬ টিতে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা বৃদ্ধি পেয়েছে ; সরকারিকরণ করা হয়েছে অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। 

তথ্য প্রযুক্তিতে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে ঠিক, তবে উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আমরা এক্ষেত্রে অনেক পিছে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে আইসিটি নৈতিকতা মানা হয় না, আর তরুণ-তরুণীরা তথ্য প্রযুক্তি ব্যহারের চাইতে অপব্যবহারই বেশী করছে। ফলে তরুণেরা ধ্বংসের মুখে নিপতিত হতে চলেছে দিন দিন। সরকারের উচিত হবে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারে সঠিক আইন বাস্তবায়ন আর বিপুল এই জনগোষ্ঠীকে কারিগরি ও তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের সঠিক প্রশিক্ষণের সুব্যবস্থা করে জনসম্পদে রূপান্তর করা। তবেই আমরা পারব আমাদের কাঙ্খিত লক্ষ্যে অর্জন করতে। জাতি পাবে উন্নত শিক্ষা, চিকিৎসা আর বাসস্থানের পরিবেশ। দেশ হবে স্বনির্ভর আর স্বাধীনতার মহান স্থপতি বাঙালি জাতির পথপ্রদর্শক বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাশিত স্বপ্নের সোনার বাংলা। 

বিশ্বজুড়ে আজ বঙ্গবন্ধুর নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে অজ¯্র রোড, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, জাদুঘর, সেতু, ইকোপার্ক আরও কতো কি! কিন্তু বাঙালির হৃদয়ে বঙ্গবন্ধুর মহান আদর্শ সুপ্রতিষ্ঠিত হয়নি আজও। বঙ্গবন্ধুর প্রতি বিন¤্র শ্রদ্ধা রেখে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে সোনার বাংলা গড়তে। তবেই বাংলাদেশ হবে সুখী সমৃদ্ধ সোনার দেশ, শান্তির পুন্যভূমি।

আমাদের শিক্ষা ও করণীয় :

১. ক্ষুধা, দারিদ্র, দুর্নীতি ও বৈষম্যমুক্ত অসাম্প্রদায়িক উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়া ছিল জাতির পিতার প্রধান স্বপ্ন। জাতির পিতার স্বপ্ন ও আদর্শ বুকে ধারন করে দেশের উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে গেলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে উঠবে। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর শোককে শক্তিতে রুপান্তরের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশকে সমৃদ্ধশালী হিসেবে গড়ে তুলতে পারি। বঙ্গবন্ধুর নিরপেক্ষ ও দূর্নীতিমুক্ত প্রশাসন এবং শাসনব্যবস্থা সর্বস্তরে প্রচলন করলে বাংলাদেশ পৃথিবীর উন্নত দেশসমূহের কাতারে নিমিষেই উপনীত হবে।

২. বঙ্গবন্ধু অন্যায়ের সাথে করতেন না কখনো আপোস। বাঙালির মুক্তির দূত হলেও বাঁচতে পারেননি বেশিদিন। নরপিশাচরা তাঁকে হত্যা করে পৃথিবীর বুকে কলঙ্কিত করেছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্ট! হারালাম এক সূর্য সন্তানকে। বঙ্গবন্ধুকে ঘাতকেরা নিশ্চন্ন করতে চেয়েছিল, কিন্তু বঙ্গবন্ধু এখনো ১৮ কোটি বাঙালির হৃদয়ে গেথে রয়েছে। এদিনটি এখন কেবল শোকের নয়, একইসাথে ইতিহাসের জঘন্যতম, নিকৃষ্ট ও নির্মম গণহত্যার স্বাক্ষী হয়ে আছে। অতএব, বঙ্গবন্ধু মানেই সোনার বাংলাদেশ। আসুন শোকের এই মাসে প্রতিজ্ঞা করতে হবে- তাঁকে হারিয়েছি কিন্তু তার স্বপ্ন ও আশাগুলোকে বাংলায় প্রতিষ্ঠিত করতে সদা জাগ্রত হই। শোক হোক শক্তি, আসুক আমাদের প্রকৃত মুক্তি।

৩. প্রাণে বেঁচে যাওযা তার সুযোগ্য কন্যা দেশরতœ শেখ হাসিনা শোককে শক্তিতে পরিণত করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সুখী-সমৃদ্ধশালী, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, উন্নত-স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানে দুর্বার গতিতে এগিয়ে  চলেছেন। প্রকৃতপক্ষে শোককে শক্তিতে রূপান্তর করতে হলে একজন আদর্শ ও দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে ব্যক্তি, সমাজ, তথা রাষ্ট্রীয় জীবনে বঙ্গবন্ধুর মহান আদর্শেও বাস্তবায়ন প্রয়োজন। ঘুষ, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, টেন্ডারবাজি, গুম, হত্যা, ধর্ষণ, অপরাধ সমূহকে প্রতিহত করার মধ্যদিয়েই শোককে শক্তিতে পরিণত করা সম্ভব। তবে রাজনৈতিক মত-বিরোধ ও ধর্মীয় গোড়ামি ছেড়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করতে হবে। এরই মাঝে বেঁচে থাকবেন চির ভাস্কর হয়ে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

৪. যিনি ছিলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী, জাতি গঠনের কারিগর, একটি পরাধীন রাষ্ট্রকে স্বাধীন করার অগ্রনায়ক। সারাজীবন স্বপ্ন দেখেছিলেন এদেশের জন্য দেশের মেহনতি মানুষের জন্য। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো তার অন্যতম স্বপ্ন ছিল। যেখানে ধনীরা গরীবকে শোষণ করবে নাহ, যেখানে খেটে খাওয়া মানুষগুলো তাদের নায্য অধিকার পাবে। যেখানে যুবকরা দেশের স্বার্থে কাজ করবে, যার স্বপ্ন ছিল একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গড়ে তোলার, একটি সোনার বাংলাদেশ গড়ার। সোনার বাংলা গড়ার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে একমাত্র যুবকদের হাত ধরেই। তাই পরবর্তী প্রজন্ম ও যুবক সম্প্রদায় যদি তার আর্দশকে বুকে লালন ও ধারণ করে, তবেই দেশ আরো সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাবে।

৫. ভাষা, দেশ ও বঙ্গবন্ধু যেন একটি অন্যের সম্পূরক ও পরিপূরক। বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ ও আমাদের স্বাধীনতা এক ও অভিন্নসূত্রে গাঁথা। বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে আজও হয়তো আমরা পরাধীন থাকতাম। বাঙালির স্বাধীনতা ছিল বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্রভাবনা। ঐতিহাসিক ৬ দফা, ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’ বিরোধী ‘৬৯ এর গণ-অভ্যুত্থান, ’৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা হস্তান্তরে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর অস্বীকৃতি ও ষড়যন্ত্রের আশ্রয় গ্রহণ, মার্চ ১৯৭১ পূর্ব বাংলায় সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন, সাত মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে সর্বপ্রকার প্রতিরোধের আহ্বান এবং ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর সরাসরি স্বাধীনতা ঘোষণা ও সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের সূচনার এই পর্ব “বাংলাদেশ বিপ্লব ১৯৭১” হিসেবে আখ্যায়িত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলেন সেই বিপ্লবের মহানায়ক। 

৬. বঙ্গবন্ধু আজ আমাদের মাঝে নেই কিন্তু তার আদর্শ, দেশপ্রেম, বজ্রকণ্ঠ, জীবনদর্শন এবং তার নেতৃত্ব আমাদের জন্য অনুকরণীয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার অগ্রনায়ক যার নেতৃত্বে আমরা বাংলাদেশ পেয়েছি, পেয়েছি মুখের প্রিয় ভাষা বাংলা এবং পেয়েছি বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে চলার সাহস। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে বারেবারে কারাবরণ করেছেন, শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে বাংলার মানুষের পক্ষে লড়েছেন। তাই শুধু বঙ্গবন্ধুর শোকে কাতর হলে চলবে না বরং সেই শোককে শক্তি বানিয়ে মুজিবীয় আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে তার একমাত্র স্বপ্ন দূর্নীতিমুক্ত সোনার বাংলা গড়ার প্রচেষ্টা আমাদেরই করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে ধারণ করে মাতৃভূমিকে রেখে এগিয়ে যেতে হবে বিশ্বের বুকে।

৭. ভয় আর শোককে উপেক্ষা করে সত্য ও ন্যায়ের পথে এগিয়ে চলাই ছিলো বঙ্গবন্ধুর লক্ষ্য। শোককে শক্তিতে রুপান্তরিত করে সোনার বাংলা বিনির্মাণের প্রত্যয়দীপ্ত অঙ্গীকারের ধ্বনি-প্রতিধ্বনিতে মুখরিত হোক। গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের কবিতা থেকে আমরা বুঝতে পারি বঙ্গবন্ধুর জন্য আমরা পরাধীনতার শিকল ভেঙে স্বাধীন হতে পেরেছি। তিনি লিখেছেন-

“শোন একটি মুজিববের থেকে

লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠস্বরের ধ্বনি-প্রতিধ্বনি

আকাশে বাতাসে ওঠে রণি

বাংলাদেশ, আমার বাংলাদেশ।”

৮. ‘নিজেদের কাজ যথাযথভাবে করলে কোথাও বিশৃঙ্খল হবে না’ বঙ্গবন্ধুর এই মহান উক্তিকে সবসময় আমাদের স্মরণে রাখতে হবে। জাতির পিতাকে হারালেও তাঁর আদর্শ বুকে ধারণ করে বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শী নেতৃত্ব, বিচক্ষণতা, কর্মপদ্ধতি, কর্মপরিকল্পনা মোতাবেক কাজ করে অচিরেই বাংলাদেশকে সুখী-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে পারি। 

আসুন, আমরা জাতির পিতার হারানো শোককে শক্তিতে পরিনত করি। সবাই মিলে একটি অসাম্প্রদায়িক, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলি। তাই তাঁর ত্যাগ ও তিতীক্ষার সংগ্রামী জীবনাদর্শন ধারণ করে বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে একটি উদীয়মান শক্তি হিসেবে তুলে ধরতে হবে। সকল প্রকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসাকে পিছনে ফেলে একটি অহিংস রাষ্ট্র গড়ে তোলার প্রয়াস করলেই আমরা স্বপ্নদ্রষ্টার স্বপ্ন পূরণে সফলতা অর্জন করব, ইনশাল্লাহ।

তথ্যসূত্রঃ

১) অসমাপ্ত আত্মজীবনী (শেখ মুজিবুর রহমান)

২) আমাদের শেখ মুজিব (কালীপদ দাস)

৩) হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু (সম্পাদনাঃ মোঃ আবুল কালাম আজাদ)

৪) রক্তাক্ত বাংলাদেশ (মোঃ হাবিবুর রহমান)

৫) মুজিবকে জানো, বঙ্গবন্ধুকে জানো (জেলা প্রশাসন, ঝিনাইদহ-২০২০)


লেখক -

তরিকুল ইসলাম মাসুম (শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক)

এমএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ। 

থিসিস ফেলো, বিসিএসআইআর (সাইন্স ল্যাব.), ঢাকা। 


No comments

Powered by Blogger.