ভুয়া হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের রমরমা ব্যবসা, প্রতারণার শিকার

 

শাহজাহান আলী সাজু॥

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার রায়গ্রাম ইউনিয়নের নিভৃত পল্লীতে সিঙ্গি বাজার সংলগ্ন "রহমান হোমিও হল" নামের একটি হোমিওপ্যাথিক ফার্মাসি নিজ বাড়িতে খুলে মাহমুদুল হাসান খান ওরফে রোকন নামের এক ভুয়া সনদবিহীন হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারের বিরুদ্ধে সাধারণ রোগীদের সাথে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। সকাল সাতটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত সপ্তাহে ছয়দিন রোগী দেখেন তিনি। প্রতিদিন প্রায় ১শত রোগী তিনি দেখে থাকেন। এই সমস্ত রোগীদের তিনি কোমরে ব্যথা, হাটু ব্যথা, নাকের পলিপাস, পাইলস, জরায়ুর ক্ষত, জরায়ুর টিউমার, মহিলাদের শ্বেত প্রদাহ, জন্ডিস, হার্ট, লিভার, মহিলাদের স্তন টিউমার, ডায়াবেটিক, যৌন ও চর্মরোগসহ নানা রোগের চিকিৎসা প্রদানের পাশাপাশি বিদেশি ঔষধও বিক্রয় করে থাকেন। শুধু তাই নয় অনেক সময় তিনি এলোপ্যাথিক ঔষধও রোগীর ব্যবস্থাপত্রে উল্লেখ করেন বলে জানান ভুক্তভূগিরা। আবার পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য কালীগঞ্জের বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী প্রেরণ করে সেখান থেকেও তিনি কমিশন পান মোটা অংকের। সাইন বোর্ড এবং ভিজিটিং কার্ডে মাহমুদুল হাসান খান তার নামের আগে ডাক্তার লিখে তার পাশে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে  অনার্স মাস্টার্স পাশের ডিগ্রী ও দুইটা হোমিওপ্যাথিক কোর্সের নাম উল্লেখ করে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ঔষধ বিক্রির কিংবা হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক হিসেবে রোগী দেখার জন্য সরকারি কোন সনদ তিনি এই প্রতিবেদককে দেখাতে পারেননি। এমনকি হোমিওপ্যাথিক ফার্মেসির জন্য তার ড্রাগ লাইসেন্সও নেই। ভুক্তভোগী রোজিনা খাতুন নামের এক রোগীর সাথে কথা হলে তিনি জানান, ছয় মাসের অধিক সময় ধরে আমার স্তন টিউমারের জন্য তার কাছ থেকে ওষুধ খাই। প্রতিবার তিনি হাজার হাজার টাকার ওষুধ দেন। সেগুলো নিয়ম মেনে খাচ্ছি তবুও কোন কাজ হচ্ছে না। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রোগী প্রতি তিনি ৩শত থেকে ৩৫ শত টাকা পর্যন্ত ঔষধ দিয়ে থাকেন। এভাবেই ভুয়া হোমিওপ্যাথিক এই চিকিৎসক রোকন গ্রামের সাধারণ অসহায় রোগীদের সরলতার সুযোগ নিয়ে প্রতিদিন হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অঙ্কের টাকা। 

এ ব্যাপারে মাহমুদুল হাসান খানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, নামের আগে ডাক্তার লেখাটা ঠিক হয়নি, ওটা আমি মুছে ফেলব। সাইনবোর্ড এবং ভিজিটিং কার্ডে ব্যবহৃত ডিগ্রী গুলোর কোন সনদ এই মুহূর্তে তিনি দেখাতে পারবেন না বলে জানান।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ঝিনাইদহ জেলার সহকারী পরিচালক নিশাত মেহের এর সাথে ভুয়া চিকিৎসক মাহমুদুল হাসান খানের অপচিকিৎসায় সাধারণ রোগীদের হয়রানীর ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাশাস্ত্রের প্রকৃত সনদধারী ব্যতীত নিজ নামের আগে ডাক্তার লিখে, বিভিন্ন কোর্সের নাম উল্লেখ করে অপচিকিৎসা প্রদান করা দন্ডনীয় অপরাধ। তার বিরুদ্ধে খোঁজ-খবর নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।


No comments

Powered by Blogger.