কালীগঞ্জে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের দিয়ে কাজ করানো ও বেঞ্চ বিক্রয়ের অভিযোগ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে

স্টাফ রিপোটার- স্কুলের কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের দিয়ে বাথরুম পরিস্কার, বাজার থেকে বিভিন্ন জিনিস ক্রয়, পাশের মাঠ থেকে কচু তুলা, বিদ্যালয়ের মিটিংয়ের খাতায় স্বাক্ষর করানো, গ্রাম থেকে দুধ ক্রয়সহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষক জেসমিন আরা খাতুনের বিরুদ্ধে। এসব ঘটনায় প্রধান শিক্ষক কতৃক বিরক্ত হয়ে এক মেধাবী শিক্ষার্থী স্কুলে যাওয়া বন্ধ করেও দিয়েছেন। ঘটনাটি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার কাদিরকোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সরেজমিনে স্কুলটিতে গিয়ে দেখা যায়, কাদিরকোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুই ছাত্র যাচ্ছেন স্কুল ম্যানেজিং কমিটির মিটিংয়ের খাতা স্বাক্ষর করাতে। শিক্ষার্থীদের নিকট জানতে চাওয়া হলে তারা জানায়, স্কুলের প্রধান শিক্ষক জেসমিন আরা খাতুন তাদের হাতে খাতা দিয়ে বলেছেন স্কুল কমিটির লোকদের স্বাক্ষর করিয়ে আনতে। শুধু খাতা স্বাক্ষরই নয় স্কুলের কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের দিয়ে স্কুলের বাথরুম পরিস্কার, বাজার থেকে সিঙ্গাড়া নিয়ে আসা, স্কুলের পাশের মাঠ থেকে প্রধান শিক্ষককে কচু তুলে দেওয়া, গ্রাম থেকে দুধ কিনে নিয়ে আসাসহ আরও অনেক কাজই করান শিক্ষার্থীদের দিয়ে। এছাড়া বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর ছাত্রী(রোল নং-১) সিপনা খাতুনের নামে প্রধান শিক্ষক বিভিন্ন কটু কথা বলার কারণে ২২দিন সেই শিক্ষার্থী স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেন। সিপনা ২২দিন স্কুলে না আসলেও প্রধান শিক্ষক একটি বারের জন্যও তাদের বাড়িতে খোঁজ খবর নেননি। তাছাড়া সিপনাকে স্কুলে নিয়মিত হওয়ার জন্য কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেননি প্রধান শিক্ষক। সিপনার মা নুরুননাহার জানান, আমার মেয়েকে দিয়ে প্রধান শিক্ষক জেসমিন আরা খাতুন স্কুলের বাথরুম পরিস্কার, দুধ কিনতে পাঠানো, খাবার গরম করে আনা, গ্রামে কবুতরের বাচ্ছা কিনতে পাঠানোসহ বিভিন্ন কাজ করান। তিনি বলেন, স্যারদের ব্যক্তিগত কাজের জন্য নয়, আমরা আমাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠিয়েছি লেখাপড়া করানোর জন্য। এছাড়া বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ২০২১-২০২২ অর্থ বছরের ক্ষুদ্র মেরামতের ২ লক্ষ টাকাসহ রুটিন মেন্টেনেন্স, স্লিপ, প্রাক-প্রাথমিকের টাকা কোন কাজে খরচ করেছেন তার কোন হিসাব তিনি দেখাতে পারেননি। প্রধান শিক্ষক বলেন, স্কুলের সভাপতির নিষেধ আছে কোন হিসাব দেখানো যাবেনা। এবিষয়ে স্কুলের সভাপতি সাব্দার হোসেন জানান, হিসাব দেখানো যাবেনা আমি এমন কোন কথা তাকে বলিনি। এমনকি স্কুলের প্রধান শিক্ষক স্কুলের পুরাতন ভবনের সরকারি বেঞ্চ টেন্ডার বা কোন রেজুলেশন ছাড়াই বিক্রি করে টাকা আত্বসাৎ করেছেন এমন অভিযোগ তোলেন তিনি। তিনি বলেন, প্রধান শিক্ষক জেসমিন আরা খাতুনের নামে কাদিরকোল গ্রামের একাধিক ব্যাক্তির অভিযোগ তিনি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দিয়ে নানান কাজ করান। এছাড়া বিদ্যালয়ে কোন অভিভাবক গেলেও তিনি তাদের সাথে খুবই খারাপ আচরণ করে থাকেন। প্রধান শিক্ষক হুঙ্কার দিয়ে বলেন আমাকে কেউ কিছু করতে পারবেনা। এই বিষয়ে কাদিরকোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জেসমিন আরা খাতুনের কাছে ফোন দেওয়া হলে তিনি জানান, আমি এখন মিটিংয়ে আছি এই বলে ফোন কেটে দেন। কালীগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মাহমুদ হাসান জানান, স্কুলের শিক্ষার্থীদের দিয়ে বাজার থেকে সিঙ্গাড়া নিয়ে আসা, কচু তোলানো, গ্রাম থেকে দুধ কিনে নিয়ে আসা, স্কুল কমিটির মিটিংয়ের খাতা নিয়ে স্বাক্ষর করাতে পাঠানোর কোন নিয়ম নেই। পুরাতন ভবনের সরকারি বেঞ্চ টেন্ডার বা কোন রেজুলেশন ছাড়াই বিক্রি করে টাকা আত্বসাৎ বিষয়ে তিনি বলেন, যদি সরকারি বেঞ্চ বিক্রি করে থাকেন তাহলে প্রমানিত হলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহন করবো। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আনন্দ মোহন জানান, স্কুলের শিক্ষার্থীদের দিয়ে লেখা পড়া ছাড়া অন্য কোন কাজ করানো যাবেনা। একজন শিক্ষার্থী ২২ দিন স্কুলে না আসলে প্রধান শিক্ষকের অবশ্যই তার বাড়িতে গিয়ে সেই শিক্ষার্থেিক স্কুলে ফিরিয়ে আনার জন্য চেষ্টা করা উচিৎ ছিলো। সরকারি টাকা যদি তিনি সঠিক ভাবে খরচ করে থাকেন তাহলে শুধু সাংবাদিক নয় যে কাউকেই তিনি কেনা-কাটা করার ভাউচার দেখাতে পারেন। সরকারি বেঞ্চ বিক্রির কোন এখতিয়ার নেই প্রধান শিক্ষকের। এটা সরকারি সম্পদ। আর যদি স্কুলের বেঞ্চ চুরি হয়ে যায় তাহলে তিনি অবশ্যই থানাতে জিডি করবেন।

No comments

Powered by Blogger.