মৌসুমী ফলগূলি কেন খাবো?

 

"ফলের রাজা আম, বেশী করে খান" এটি একটি উপদেশ। শুধু আম নয়, মৌসুমী ফল খাওয়ার গূরুত্ব অপরিসীম। সৃষ্টিকর্তা তাইতো নানান মৌসুমে নানান ফল আর ফুলের সমাহার ঘটান। পরিমিত ফল প্রতিদিন খেলে যেসব উপকার হয়ঃ 

ক. দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়

খ. শরীরের ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ হয়

গ. ভিটামিন এর অভাব পূরণ হয়

ঘ. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে

ঙ. ডায়াবেটিকস এর ঝুকি কমে যায়

চ. লৌহ ও খনিজ লবণের ঘাটতি থাকে না প্রভৃতি।

আমাদের দেশে সহজলভ্য এমন ফল নিয়ে আলোচনা করব -

এক. আমলকী

ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফলের নাম মাথায় আসলে আমলকীর নাম বিশেষভাবে স্বীকৃত। ঐর শুধু পুষ্টিগুণে নয়, ঔষধিগুণেও এর বেশ কদর রয়েছে। এজন্য আমলকীকে অমৃত ফল হিসেবেও অভিহিত করা হয়। এটি একটি শীতকালীন ফল। শীতকালে গাছের পাতা ঝরে যায় এবং ফল পাঁকে। এর ইংরেজি নাম ঊহবনষরপ সুৎধনড়ষধহপব এবং বৈজ্ঞানিক নাম ঊসনষরপধ ড়ভভরপরহধষরং. 

আমলকীর ফলগুলো ছোট এবং গোলাকৃতির। বেশ মাংসল, রসালো এবং ভেতরে পানির মতো স্বচ্ছ দেখায়। ভেতরে যে শক্ত আঁটি থাকে তাতে ছয়টি করে সুপুষ্ট বীজ থাকে। কিছুটা টক স্বাদযুক্ত এই ফলটির জন্মস্থান কারও মতে ভারত, আবার কেউবা বলেন ভিয়েতনাম।

আমলকীর প্রতিটি ফলে প্রায় ৮১% পানি বা জলীয় রস থাকে। এছাড়াও প্রোটিন ০.৫ ভাগ, স্নেহ ০.১ ভাগ, খনিজ ০.৭ ভাগ, ফসফরাস ০.০২ ভাগ এবং লৌহ থাকে ১.২ ভাগ। প্রতি ১০০ গ্রাম আমলকীর শাঁসে ৬০০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি রয়েছে।

দুই. আতা

স্বল্পজীবি ফলদ উদ্ভিদ হিসেবে পরিচিত আতা একটি অন্যতম ফল। এটি বাড়ির আনাচে-কানাচে, ঝোপঝাঁড়ে অযতেœ অবহেলায় বেড়ে ওঠে। আতা গাছ ৬ - ৮ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। শীতকালে আতা গাছের পাতা ঝরে যায়। শীতের শেষে বসন্ত এসে আতা ফল পাঁকিয়ে দেয় সাধারণত ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে। এই আতা গাছে কাঁঠালি চাঁপার মতো বাহারি সুগন্ধি ফুল আসে মে-জুন মাসে।

কথিত আছে, নাবিক কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কারের অনেক আগেই পর্তুগিজরা প্রশান্ত মহাসাগরীয় কোন দ্বীপ থেকে ভারতবর্ষে আতা নিয়ে আসে। তারপর ধীরে ধীরে গোটা ভারতীয় উপমহাদেশে এটি ছড়িয়ে যায়।

চমৎকার স্বাদযুক্ত এই ফলের ভেতরে নরম শাঁস থাকে। এটি বিভিন্ন আকারের হতে পারে। আমাদের দেশে লালচে ও সাদা রঙের ফলগুলোই বেশী দেখা যায়। আতা ফলের ইংরেজি নাম ইঁষষড়পশং যবধৎঃ এবং বৈজ্ঞানিক নাম অহড়হধ ৎবঃরপঁষধঃব. প্রোটিন, স্নেহ, খনিজ লবণ, শর্করা, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এবং লৌহ সমৃদ্ধ এই ফলটিতে যথেষ্ট ক্যালরি বিদ্যমান।

তিন. সফেদা

ছোট বেলায় ছফেদা নামটি শুনলে ভাবতাম এটি ফল নাকি মেয়ে মানুষের নাম! হ্যা, চমৎকার স্বাদযুক্ত এবং পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ এটি একটি ফলের নাম। গাছ মাঝারি আকৃতির এবং ৮-১০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। আমাদের দেশের খুলনা, যশোর, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর ও বরিশাল অন্ঞ্চলে প্রচুর ছফেদা উৎপন্ন হয়। সবুজ বর্ণের পাতাগুলো দেখতে ডিম্বাকৃতির। মেটে বর্ণের এই ফলটি সবার কাছেই বেশ জনপ্রিয়।

দক্ষিণ আমেরিকার মেক্সিকো সফেদার জন্মস্থান নামে সমধিক প্রসিদ্ধ। এটি একটি শীতকালীন ফল, তবে ফুল ফোটে গ্রীষ্মকালে যা দেখতে বকুল ফুলের মতো। ছফেদার ইংরেজি নাম ঘববংনবৎৎু এবং বৈজ্ঞানিক নাম গধহরষশধৎধ তধঢ়ড়ঃধ. 

ছফেদা কাঁচা খাওয়ার উপযোগী নয়। পাঁকা ফলের গায়ের রঙ দেখতে অনেকটা বাদামি বর্ণের এবং শাঁস রসালো ও মিষ্টি। প্রতি ১০০ গ্রাম সফেদায় ০.৭ ভাগ প্রোটিন, ১.১ ভাগ ফ্যাট, ০.৫ ভাগ খনিজ, ২১.৪ ভাগ কার্বোহাইড্রেট, ০.২৮ ভাগ ক্যালসিয়াম। এছাড়াও ফসফরাস, ভিটামিন ও লৌহ পাওয়া যায়। প্রতি কেজি ফল থেকে ৭০০ ক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়।

চার. লটকন

লটকন গাছটি দক্ষিণ এশিয়ায় বুনোগাছ হিসেবে জন্মালেও বাংলাদেশ, মালেশিয়া ও থাইল্যান্ডে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়। টক-মিষ্টি স্বাদযুক্ত এই ফলটির বৈজ্ঞানিক নাম ইধপপধঁৎবধ সড়ঃষবুধহধ. এটি বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন নামে পরিচিত। জধসনর, জধসনধর, গধভধর - ভধৎধহম, খধসশযধব, জধ সধর প্রভৃতি নাম রয়েছে এর। এটি ১০-১২ মিটার লম্বা হয়ে থাকে। ফলের আকার ছোট এবং থোকায় থোকায় আঙুরের ফলের মতো দেখতে। এর ফুলগুলো সুবাস ছড়ায় আর ফলে পরিণত হলে হলুদ বর্ণেও দেখায়।

লটকন গাছের বাকল থেকে রং সংগ্রহ করা হয় যা রেশম সুতা রাঙানোর কাজে ব্যবহৃত হয়। আর ফল সরাসরি খাওয়া যায়, তবে জ্যাম জ্যালি তৈরিতে বেশী ব্যহৃত হয়। বাংলাদেশে এক সময় অপ্রচলিত ফলের তালিকায় থাকা এই ফলটি বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়। এতে এমাইনো এসিড ও এনজাইম থাকে যা শরীর গঠন ও কোষের সুস্থতার সহায়ক।

বাংলাদেশের নরসিংদীতে লটকনের ফলন সর্বাধিক। বর্তমানে সিলেট, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলায় বাণিজ্যিকভাবে লটকন চাষ করা হচ্ছে। সুমিষ্ট এই ফলটির চাষ বৃদ্ধির পাশাপাশি জনপ্রিয়তাও বেড়েছে বেশ।

পাঁচ. কৎবেল

 কৎবেল একটা দেশীয় ফল। ভারতীয় উপমহাদেশই এর জন্মস্থান অর্থাৎ বাংলাদেশ, ভারত, মায়ানমার কৎবেল এর বিস্তৃতি বেশী। ফলটি অনেকটা ক্রিকেট বলের মতোই তবে রঙে ভিন্ন! কাঁচা ফলের রং ধূসর বর্ণের এবং পাঁকা ফল কালচে রঙের হয়।

কৎবেলের গাছ ১৫-১৬ মিটার লম্বা হতে পারে। এর পাতা গাঢ় সবুজ বর্ণের, ঘন, ছায়াযুক্ত এবং বেশ গন্ধযুক্ত। ডালে ছোট ছোট কাটা থাকে এবং শীতকালে গাছের পাতা ঝরে যায়। সাধারণত মার্চ - এপ্রিল মাসে গাছে ফুল ফোটে। ফুলের রঙ বাহারি লাল সাদা হয়ে থাকে। কাঁচা কিংবা পাঁকা উভয় অবস্থাতেই এই ফল খাওয়া যায়।

কৎবেল পুষ্টিগুণের দিক থেকেও সমৃদ্ধ। এর ইংরেজি নাম ঊষরঢ়যধহঃ ধঢ়ঢ়ষব এবং বৈজ্ঞানিক নাম ঋবৎড়হরধ খরহপড়হরধ. প্রায় ৭০ ভাগ জলীয় রসযুক্ত ফলটিতে ৭.৩ ভাগ প্রোটিন, ০.৬ ভাগ স্নেহ, ১.৮ ভাগ খনিজ লবণ, ১৫.৫ ভাগ শর্করা এবং ৫.২ ভাগ আঁশ বিদ্যমান। এছাড়াও ফসফরাস, ক্যালসিয়াম ও লৌহ রয়েছে। এই ফলের গুরুত্ব অপরিসীম।

ফলের একটি ছড়া আছে -

"আম জামরুল কৎবেল

অতা আম নারিকেল

তাল তরমুজ আমড়া

কামরাঙ্গা বেল পেয়ারা

পেঁপে ডালিম জলপাই

বরই দিলাম আর কি চাই ?'



No comments

Powered by Blogger.